পণ্য খালাসে ভোগান্তি, জায়গা চান ব্যবসায়ীরা
সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর

পণ্য খালাসের জায়গা না থাকায় বিপাকে পাথর আমদানিকারকরা। ছবি: ইউসুফ আলী
মুকিত রহমানী, সিলেট
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:১১ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:০১
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ও চুনাপাথর খালাসের জায়গা পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। জিরো পয়েন্ট পার হয়ে প্রধান সড়কের পশ্চিম দিকে স্থলবন্দরের চলমান নির্মাণ কাজ এবং পূর্বদিকে পর্যটনের খালি জায়গা দখল করে চলছে পাথর ব্যবসা। আবার ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সড়কের দুই পাশে ৩০০ ও ১৫০ মিটার জায়গাজুড়ে পণ্য খালাসের নির্দেশনা রয়েছে। এতে প্রতিদিন দেশে প্রবেশ করা শতশত ট্রাকের পাথর কখনও রাস্তায়, স্থানীদের বাড়ির আঙিনা কিংবা ক্রাশার মিলে খালাস করতে হচ্ছে। সেখান থেকে অন্য ট্রাকে ওই পণ্য সরিয়ে নিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তারা এখন ৭০০ মিটার থেকে বাড়িয়ে ২১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় পণ্য খালাসের অনুমতির দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, পাশের পর্যটনকেন্দ্রে আসা শতশত যানবাহন ও পর্যটকরাও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। স্থলবন্দরের পাশেই সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র ঘাটের অবস্থান।
দেড় বছর আগে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জকে ২৪তম স্থলবন্দর ঘোষণা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৯ সালে গ্যাজেট প্রকাশ করা হয়। স্থলবন্দর দিয়ে কার্যক্রম শুরুর পর জিরো পয়েন্ট পার হয়ে এক সময় রাস্তার উভয় পাশে পণ্য খালাস করতেন ব্যবসায়ীরা। এক সময় সে এলাকায় শতশত স্টোন ক্রাশার মিল ছিল। সেইসব মিল সরিয়ে পশ্চিম পাশে স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি পূর্বপাশের ৫২ একর ৩০ শতক জায়গা পর্যটনকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করে সেখানে দেয়াল নির্মাণ করা হয়। গত বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ওই দেয়াল তৈরি করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। দেয়ালটি ৫ আগস্টের পর ভেঙে ফেলা হয়। লুট করা হয় ইটও। ধীরে ধীরে সেখানে বসানো হয় মিনি ক্রাশার মেশিন ও রাখা হচ্ছে চুনাপাথর।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পর্যটনকেন্দ্রের জায়গায় ২৫টি মিনি স্টোন ক্রাশার মেশিন বসানো হয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে চুনাপাথরের স্তূপ আর স্তূপ। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিনসহ কয়েকজন দখল করে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন বলেন, আমদানিকারকরা যে যেভাবে পারছে, পাথর রাখছেন। আমি কোনো জায়গা দখল করিনি।
গত চার মাস ধরে ভারতীয় পাথরবাহী ট্রাক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতির দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল জানিয়েছেন, দেশের একাধিক বন্দরে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত পণ্য খালাসের সুবিধা রয়েছে। অথচ ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরে মাত্র এক কিলোমিটার। আমরা তিন কিলোমিটার এলাকায় পণ্য খালাসের দাবি জানিয়েছি।
কোম্পানীগঞ্জ স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জুন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ ডিও লেটার দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সিলেটের জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়। সরকার পতনের পর বিষয়টি আর এগোয়নি। সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন স্টোন ক্রাশার মিল মালিকরা। পরে সিলেটের কাস্টমস কমিশনারকে রাজস্ব বোর্ড চিঠি দিলে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে কাস্টমস বিভাগ। ইতোমধ্যে কাস্টমস বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে।
কাস্টমস কমিশনার তাসনিমুর রহমান জানান, ব্যবসায়ীদের অসুবিধা ও বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে। কত কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত পণ্য খালাসের অনুমতি দেওয়া হবে সেটা দেখবে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
- বিষয় :
- স্থলবন্দর
- পণ্য খালাস
- ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর