ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চলতি মৌসুমে জয়পুরহাটে ২০০ টন গুড় উৎপাদনের আশা 

চলতি মৌসুমে জয়পুরহাটে ২০০ টন গুড় উৎপাদনের আশা 

ছবি: সমকাল

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:৫০

উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। রস থেকে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু মুখরোচক গুড়। শীতের কুয়াশা ভেজা ভোরের আগেই রস ভর্তি মাটির কলসি গাছ থেকে নামানোর পর টিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করা হচ্ছে।

মান ভালো হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে গুড় কিনতে আসছেন সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকেই আসছেন খেজুরের রস পান করতে। তবে নিপা ভাইরাসের কারণে কাঁচা রস না খেয়ে ফুটিয়ে বা গুড় করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

সপ্তাহখানেক ধরে চলছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের প্রকোপ। এ মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছি জয়পুরহাটে এসেছেন খেজুরের রস সংগ্রহে। তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৫ হাজার খেজুর গাছ ভাড়া নিয়ে রস সংগ্রহ করছেন। বর্তমান সময়ে যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর চুলায় টিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। কয়েকটি প্রক্রিয়া শেষে তৈরি করা হয় সুস্বাদু গুড়। ভেজালমুক্ত গুড় কিনতে জয়পুরহাটে আসছেন সাধারণ ক্রেতারা। অনেকে আসছেন খেজুরের রস পান করতে। ৪ মাস ধরে চলবে এই রস সংগ্রহ। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ২০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট শহরের কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকায় এসেছেন গাছি আনছার আলী। তিনি বলেন, কার্তিক মাসে আমরা জয়পুরহাটে এসে বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ ভাড়া নিয়ে হাঁড়ি লাগিয়েছি। ৫ জন মিলে ৩৫০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মণ রস সংগ্রহ হয়। প্রতিদিন গড়ে গুড় উৎপাদন হয় দুই থেকে তিন মণ। পুরো মৌসুমে গুড় সংগ্রহ হবে প্রায় ৫০০ মণ। এখানে বিক্রির পর রাজশাহীতেও গুড় পাঠানো হয়। 

একই জেলার গাছি হেলাল বলেন, আমাদের মতো আরও অনেক গাছি জয়পুরহাটে এসে গাছ ভাড়া নিয়ে রস সংগ্রহের পর গুড় তৈরি করছেন। এখানে ৪০০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের রস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা লিটার। সবমিলিয়ে লাভ ভালোই। 

গুড় কিনতে আসা বেলআমলা গ্রামের মনজিল হাসান মুরাদ বলেন, কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকায় ভালোমানের গুড় ও খেজুরের রস পাওয়া যায় শুনে আমি গুড় কিনতে ও রস পান করতে এখানে এসেছি। সত্যিই ভালোমানের গুড় বলে ৫ কেজি কিনলাম।

পাথুরিয়া গ্রামের এনতাজ বলেন, শীতের দিনে আমার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসেছে। পিঠা তৈরির জন্য গুড় কিনতে এসেছি। এখানকার গুড় অনেক ভালো। আমার মতো আরও অনেকেই এসেছেন।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় এবার ১৫ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। ২০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। বাদুড় বা এই জাতীয় প্রাণি রসের সংস্পর্শে যাতে করে না আসে এজন্য আমরা গাছিদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। 

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিন বলেন, রাতে খেজুর গাছের রস বাদুড় খায়। এই রস কাঁচা খেলে নিপা ভাইরাসের আশঙ্কা থাকে। কোনোভাবেই কাঁচা খেজুর রস পান করা যাবে না। কাঁচা রস কেউ যাতে না পান করে এজন্য গাছিদের ও এলাকায় মানুষদের সতর্ক করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×