ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু শিশুরা

ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু শিশুরা

রাইয়ার পায়ে স্যালাইনের নল। তাকে আগলে রেখেছেন মা রিমা আক্তার সমকাল

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:২২

রাইয়া আক্তারের বয়স সবে ৩৭ দিন। শরীরের কোথাও যুক্ত করার মতো শিরা না পাওয়ায় পায়ে দেওয়া হয়েছে স্যালাইনের সংযোগ। তিন দিন ধরে শিশুটি ভর্তি কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। গতকাল বুধবার শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, রাইয়াকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা রিমা আক্তার। এ ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৬০টি হলেও এদিন চিকিৎসাধীন ছিল ১০০ শিশু। তাদের বেশির ভাগই ভুগছে ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া ও জ্বরে। বাকি শিশুদের নিয়ে মেঝেতে শয্যা পেতে থাকতে হচ্ছে স্বজনদের। 
রাইয়ার বাবা রাজিব মিয়া কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি এলাকার বাসিন্দা। শিশুটির মা রিমা বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর মেয়েটির খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে রোববার সৈয়দ নজরুল মেডিকেলে এনে ভর্তি করেন। পরে পায়ে স্যালাইন যুক্ত করেন চিকিৎসকরা। 
নিউমোনিয়া নিয়ে এখানেই চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন এক মাস বয়সী মার্জিয়া আক্তার। সে কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা এলাকার শিহাব উদ্দিনের মেয়ে। শিশুটির মা মুক্তা বেগম জানিয়েছেন, চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর এখন কিছুটা ভালো আছে তাঁর মেয়ে। 
করিমগঞ্জ উপজেলার সাদকখালী এলাকার সুজন মিয়ার ৪৮ দিনের ছেলে শফিকুল ইসলামও আক্রান্ত হয়েছে নিউমোনিয়ায়। তীব্র জ্বরও রয়েছে। শিশুটির মা হ্যাপি আক্তারের ভাষ্য, বাড়িতে ছেলের প্রচণ্ড জ্বর দেখা দেয়। পরে  নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। চার দিন ধরে এখানে চিকিৎসাধীন। অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। 
শয্যা না পেয়ে তিন মাসের রাফিজাকে নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতেই আছেন মা রহিমা আক্তার। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকায়। রহিমা বলেন, সর্দির পাশাপাশি মেয়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মেঝেতে থাকায় ঠান্ডা বেশি লাগছে। তবে চিকিৎসা ঠিকমতোই পাচ্ছে বলেও জানান তিনি। 
এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের মধ্যে সদ্যোজাত থেকে ৫ বছর বয়সীরা রয়েছে। তারা সবাই ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। একই ওয়ার্ডের আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে অন্তত ২০ সদ্যোজাত শিশুকে। চিকিৎসক ও মা ছাড়া অন্য কারও প্রবেশাধিকার নেই সেখানে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ঠান্ডা বাড়ার কারণেই শিশুরা এখন নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়। তারা সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
জেলার সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে জানা যায়, জেলা শহরের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালেও ঠান্ডাজনিত রোগে ভর্তি আছে ৩০টি শিশু। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে গড়ে ৬০ জন শিশু চিকিৎসাধীন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত রোগে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। তিনি শিশুদের প্রতি আরও যত্নশীল হতে বলেন।

আরও পড়ুন

×