ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

‘ছেলেকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, আকাশের তারা পেয়েছি’

‘ছেলেকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, আকাশের তারা পেয়েছি’

স্বজন ফিরে পাওয়ার আনন্দ পরিবারে। ছবি: সমকাল

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২১:৪৬

সকাল সোয়া ৯টা। কুয়াশা তখনও কাটেনি। দূর থেকে ভেসে আসা জাহাজের সাইরেন কানে লাগতেই উৎকণ্ঠিত মুখে মুখে হাসির ফোয়ারা। প্রিয় স্বামীকে কাছে পেতে কারও অপেক্ষা, আবার কেউ ক্ষণ গুনছেন কলিজার টুকরো সন্তানের জন্য। প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার জেটিতে ভেড়ে কোস্টগার্ডের জাহাজ। এর পর একে একে নোঙর করে এফভি লায়লা-২ ও এফভি মেঘনা-৫। জাহাজ থেকে নেমে কোস্টগার্ড আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলে এসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন ৯০ নাবিক ও জেলে। কেউ স্বজনকে জড়িয়ে কান্নায় চোখ ভাসান। কেউ প্রিয়জনের বুকে মাথা গুঁজে জানান দেন স্বজনকে ফিরে পাওয়ার স্বস্তি।
 
তাদেরই একজন জেলে আতিকুর রহমানের বাবা মো. হাবিব। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, আকাশের তারা পেয়েছি। প্রায় এক মাস দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছি। রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে।’

ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক ও আশ্রয়ে থাকা ৯০ জেলে ও নাবিককে মঙ্গলবার সকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। এর আগে ৫ জানুয়ারি ভারত ও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা হিরণ পয়েন্টে ৯০ জেলে ও নাবিককে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। এ সময় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে আটক থাকা ৯৫ ভারতীয় জেলে ও নাবিককে দেশটির কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হক জানান, গত বছর ভারতের ৯৫ জেলেসহ ছয়টি ফিশিং বোট আটক করে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি ফিশিং বোট এফভি কৌশিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে  ডুবে যায়। বোটটির ১২ জেলেকে উদ্ধার করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। তাদের ভারতে নেওয়া যায়। গত ৯ ডিসেম্বর এফভি লায়লা-২ ও এফভি মেঘনা-৫ নামে দুটি জাহাজ ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। তাদের অভিযোগ ছিল, ভারতীয় জলসীমায় মাছ ধরছিল জাহাজ দুটির জেলেরা। সেখানে ৭৮  নাবিক ও জেলে ছিলেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফেরাতে উদ্যোগ নেয়। দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়। বন্দি বিনিময়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে। সেই প্রেক্ষাপটে গত রোববার বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা এলাকায় বাংলাদেশে অবস্থানরত ৯৫  ভারতীয় জেলেকে ছয়টি বোটসহ দেশটির কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একইভাবে ভারতে থাকা ৯০ জেলে এবং দুটি ফিশিং বোট কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গত সোমবার রাতে তাদের আনা হয় চট্টগ্রামে। ইতোমধ্যে সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এফভি লায়লা-২-এর নাবিকরা জানান, গত ৯ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ জলসীমায় তারা মাছ ধরছিলেন। এ সময় ভারতীয় কোস্টগার্ড এসে তাদের জাহাজে তল্লাশি চালায়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা সেখান থেকে বাংলাদেশ জলসীমার আরও ভেতরে চলে আসেন। এক পর্যায়ে জাহাজের রেডিও বার্তায় ভারতীয় কোস্টগার্ড জানায়, তাদের একটি আইফোন তারা জাহাজে ফেলে গেছে। সেটি ফেরত দিতে তাদের সেখানে যেতে বলা হয়। তারা জাহাজ নিয়ে সেখানে গেলে তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হক বলেন, ‘অভিযোগ ছিল ভারতীয় সীমানার ভেতরে গিয়ে মাছ ধরছিল। সে কারণে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা পুরোটা যাচাই করে দেখব।’   

এফভি মেঘনা-৫-এর প্রধান প্রকৌশলী শরিফুল আলম বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে যেভাবে মাছ ধরা হয়, আমাদের জাহাজ সেভাবে মাছ ধরছিল। বিস্তারিত আর বলতে চাই না। পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি এতেই আনন্দ হচ্ছে।’

এফভি মেঘনা-৫ জাহাজের ক্যাপ্টেন রাহুল বিশ্বাস জানান, গত ৯ ডিসেম্বর ওই জেলে-নাবিকরা সাগরের বর্ডার লাইনে ভারতের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হন। এর পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ও সরকারের সহযোগিতায় তারা মুক্ত হয়েছেন। এ সময়ে রসদ ও জ্বালানিজনিত কোনো সমস্যা হয়নি। 

এফভি কৌশিকের কয়েকজন নাবিক জানান, গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ভারতের জলসীমায় চলে যান তারা। সেখান থেকে ভারতীয় মাছ ধরার বোটগুলো তাদের উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যায়। পরে তাদের ভারতীয় কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা সেখানকার কারাগারে ছিলেন। 

আরও পড়ুন

×