ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নতুন কম্বল পেয়ে আনন্দের কান্না

নতুন কম্বল পেয়ে আনন্দের কান্না

গভীর রাতে শীতার্ত শিশু শিক্ষার্থীদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছনে ত্রিশালের উপজেলা সহকারী কমিশনার মাহবুবুর রহমান। ছবি: সমকাল

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৩:৫৮

হাড় কাঁপানো শীতে মাত্র একটি কাঁথা মুড়িয়ে মাদ্রাসার মেঝেতে ঘুমিয়েছিল আট বছর বয়সী জিহাদ হাসান। ফজরের আজানের আগেই শিক্ষকের ডাকে ঘুম ভাঙে তার। জেগে দেখে, তার গায়ে জড়ানো একটি নতুন কম্বল।

মা-বাবাহারা শিশুটি বুঝতে পারছিল না স্বপ্ন, নাকি বাস্তব। ঘুমের ঘোর কাটতেই যখন বুঝতে পারে এ তো স্বপ্ন নয়, সত্যি; সেই কম্বল জড়িয়ে কাঁদতে থাকে শিশুটি। সে অশ্রু দুঃখের নয়, আনন্দের। এর খানিকটা পর শিশুটি তার শিক্ষকের কাছে জানতে পারে, গভীর রাতে কম্বলটি তার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন ত্রিশাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান।

গত মঙ্গলবার রাতে কানিহারী ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ আরও দুটি ইউনিয়নের ৫টি মাদ্রাসায় কম্বল দেওয়া হয়। অসহায় শিক্ষার্থীদের গায়ে নিজ হাতে কম্বল জড়িয়ে দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার।

শীতে কাঁপছে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের কিছুটা উষ্ণতা দিতে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব কম্বল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করার কথা। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠে নেই জনপ্রতিনিধিরা। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করছেন। তবে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেল ময়মনসিংহের ত্রিশালে। গভীর রাতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান। শীতার্তদের গায়ে জড়িয়ে অথবা হাতে তুলে দিচ্ছেন কম্বল।

গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে কানিহারী ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের জামতলী মোড় এলাকার দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ছুটে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার। শিক্ষককে ডেকে তুলে তাঁর সঙ্গে মাদ্রাসার ভেতরে যান তিনি। এ সময় দেখতে পান, ৪৫ জনের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীর গায়ে লেপ কিংবা কম্বল আছে। বাকিরা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শীতে কাঁপছে। তখন এসব অসহায় শিক্ষার্থীর গাঁয়ে কম্বল জড়িয়ে দেন তিনি।

একই রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছলিমপুর ব্যাপারীপাড়া বায়তুল কোরআন নূরানি ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা, জামিয়া দারুল মারিফ বালক-বালিকা মাদ্রাসা, মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরি ঈদগা মাঠ নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও পৌর শহরের সেকান্দর ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৫০টি কম্বল বিতরণ করেন। এর আগে একইভাবে গভীর রাতে আউলিয়ানগর ও ফাতেমানগর নামে দুটি রেলস্টেশন, ধানীখোলা, বইলর, কাঁঠাল, রামপুর ও বালিপাড়া ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার।

বুধবার সকালে দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক শাহীন আলম ফোন করে জানান কম্বল পেয়ে খুশি অসহায় শিক্ষার্থীদের কথা।

মাদ্রাসার পরিচালক ইদ্রিস আলী বলেন, এমন মানবিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রয়োজন প্রতিটি দপ্তরে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে গিয়ে নিজ হাতে কিছু দিতে পারলে তৃপ্তি পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

×