মিলেমিশে ঘুষ খান তারা
চারঘাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

ফাইল ছবি
সনি আজাদ, (চারঘাট) রাজশাহী
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০০:৪১
চারঘাটে জমি রেজিস্ট্রেশনের নামে অবৈধভাবে ফি আদায় করা হয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। এ ছাড়া দলিলের নকল কপি তোলা, অংশনামা ও চুক্তিপত্রের মতো দলিল সম্পাদনেও নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ। ঘুষের কবল থেকে বাদ যান না দলিল লেখকরাও। তাদের সনদ নবায়নেও নেওয়া হয় নির্ধারিত টাকার ছয়গুণ। অফিস সহকারী সুফিয়া খাতুনের মাধ্যমে অনিয়মের এ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন সাব-রেজিস্ট্রার খালেদা সুলতানা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পকেট কমিটির (দলিল লেখক সমিতি) দাপটে দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছিল চারঘাট-বাঘার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। দুই অফিস থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা যেত দলটির নেতাদের পকেটে। গত ২২ জুন কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষে বাঘা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর এ সিন্ডিকেট ভেঙে যায়। বর্তমানে সমিতি না থাকলেও দাপটের সঙ্গে ঘুষবাণিজ্য করে যাচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রার ও তাঁর সহকারী। উপজেলায় প্রতি বছর গড়ে চার হাজার ও প্রতি মাসে ৩০০-৩৫০টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। দলিলপ্রতি গড়ে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা ধরলে চার হাজার দলিলে বছরে ৮০ লাখ টাকা যাচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রারের পকেটে।
নিবন্ধিত একটি দলিলের নকল তুলতে গত সপ্তাহে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়েছিলেন মিয়াপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন। নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কোর্ট ফিসহ সরকারি ফি আসে ১ হাজার ৫০ টাকা। তাঁর কাছ থেকে অতিরিক্ত নেওয়া হয় ৬৫০ টাকা।
১০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করতে যান অনুপামপুরের আব্দুল মান্নান। দলিলে উল্লিখিত টাকার পরিমাণ ১১ লাখ। সরকারি কর দেওয়ার পরও নিবন্ধন করতে তাঁর কাছ থেকে দলিল লেখক অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা আদায় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখক জানান, প্রতিটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে প্রথম এক লাখে ২ হাজার টাকা, এর পরের প্রতি এক লাখে দুইশ টাকা বাড়তি হারে সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয়। প্রতিবাদ করলেই সনদ বাতিলসহ নানা রকম ঝুঁকি আসে। তাই টাকা দিয়ে চুপচাপ কাজ করছি।
লেখকদের সনদ নবায়ন বাবদ নির্ধারিত ফি ২৫০ টাকার সঙ্গে ৩৮ টাকা ভ্যাটসহ সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে দেওয়ার কথা। নেওয়া হচ্ছে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা। একজন দলিল লেখককে ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে। চারঘাটে ২০-২৫ জনের এ সনদ নেই। তারা টাকা দিয়ে সনদ নিচ্ছেন। কয়েকজন দলিল সম্পাদন না করেও সনদ নিয়ে মাসিক ভাতা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস সহকারী সুফিয়া খাতুন বলেন, নবায়ন ফি কত টাকা জানা নেই। অফিস নির্ধারণ করায় দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছি। তা থেকে কর্মচারীদের কিছু টাকা দিতে হয়, যে কাগজে সিল মারে তাকে কিছু দিতে হয়। স্যার সই করেন, তাঁর কাছেও কিছু টাকা যায়।
সাব-রেজিস্ট্রারের এ সহকারী সুফিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তিনি ২০ বছর ধরে নকলনবিশ ও টিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় কাগজপত্রে তাঁর জন্মতারিখ ছিল ১১ মার্চ ১৯৬২। ২০১৪ সালে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখানে জন্মতারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০। বয়সের এ রকমফেরের কারণে কৈফিয়ত তলব করা হয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে মহাপরিদর্শক নিবন্ধন অফিস থেকে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। আড়াই বছর ধরে তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। সরকারি নথিপত্রে তাঁকে স্বাক্ষর করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুফিয়া খাতুনের ভাষ্য, প্রতারণা নয়, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সংশোধনের কাজ চলছে। তবে আড়াই বছর ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
সাব-রেজিস্ট্রার খালেদা সুলতানা বলেন, দলিলপ্রতি ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মিথ্যা। সনদ নবায়ন ফি বাবদ সুফিয়া খাতুনের টাকা আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। তিনি অফিসে এলেও তাঁকে দিয়ে কোনো কাজ করানো হয় না।
- বিষয় :
- রেজিস্ট্রার