ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

দখলে-দূষণে বিপন্ন উত্তরাঞ্চলের দুই নদী

পৌর নালার বর্জ্যে নাব্য হারাচ্ছে করতোয়া নদী

পৌর নালার বর্জ্যে নাব্য হারাচ্ছে করতোয়া নদী

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পৌরসভার আবর্জনা ফেলায় ভরাট হচ্ছে করতোয়া নদী সমকাল

 এনামুল হক, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫ | ০১:০৩

উত্তরাঞ্চলে এক সময়ের দুই খরস্রোতা নদী সূতিখালী ও করতোয়া। নিয়মিত পণ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল করত। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো মানুষ। নদীর পানি সেচের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু দখল-দূষণে সংকুচিত হয়ে নাব্য হারিয়েছে নদী দুটি। আগের মতো মাছ মেলে না। পৌরসভার নালার সংযোগ দেওয়ায় পানি কালচে হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, আবর্জনায় হচ্ছে ভরাট। পানি না থাকায় নদীর বুকে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ। খনন করে নদী দুটিতে নাব্য ফেরানোর দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। এরই মধ্যে একটি নদী খননের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।


পৌরসভার নালার সংযোগ দেওয়ার আগে নদীর পানিতে মাছ পাওয়া যেত। দুই পারের মানুষ গোসল করত। এখন নালার দুর্গন্ধযুক্ত পচা পানি পুরো এলাকার পরিবেশ দূষণ করছে। কথাগুলো করতোয়া নদীর খলশী স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা শাহীন আলমের। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় একসময়ের খরস্রোতা নদীটি পৌরসভার নালায় ভেসে আসা বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে। এতে নাব্য হারিয়ে এখন মৃতপ্রায় করতোয়া।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নালার পানির সঙ্গে আসা বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য এবং বাসাবাড়ি ও হাটবাজারের ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে ও মশা-মাছির অত্যাচারে অতিষ্ঠ নদীপারের মানুষ। মাঝেমধ্যেই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। নালার পথ পরিবর্তনের দাবি তাদের।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে মিশেছে। একসময় এ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো জেলে। চলাচল করত নানা ধরনের পণ্যবাহী নৌকা। এতে নদীর দু’পাশে গড়ে ওঠে শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র। ছিল অসংখ্য জেলেপল্লি। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দখল-দূষণসহ নানা কারণে এর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হারিয়ে গেছে নাব্য।
এখন শুধু বর্ষাকালে দেখা মেলে নদীর পানিপ্রবাহ। অন্য সময় প্রায় পানিশূন্য থাকে। এরপরও বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা পানিতে পাওয়া যেত দেশি মাছ। পৌরসভার নালা করতোয়া নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করায় তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ নালা দিয়ে শহরের বাসাবাড়ি, দোকান-হোটেল, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও হাটবাজারের পশু জবাইয়ের ময়লা পানি প্রবাহিত হয়। অটোরাইস মিলের আবর্জনা ও ছাইয়ে নদী ভরাট হচ্ছে। 
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কাজেম উদ্দিনের ভাষ্য, করতোয়া নদীর পানির যে অবস্থা, মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণীও বসবাস করতে পারে না। এ ছাড়া অটোরাইস মিলের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানির সঙ্গে ভেসে আসা ছাইয়ে তলদেশ ভরাট হয়ে স্থায়ীভাবে নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে নালার মুখ বন্ধ করে নদীর গতিপথ স্বাভাবিক করার দাবি জানান তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এম এ মতিন মোল্লা বলেন, প্রশাসন অবৈধ দলখদার, পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযান চালায়। পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন ইউএনও। তিনি থাকাকালীন দখল-দূষণ মুক্ত না করে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়, সেটা দুঃখজনক। 
ইউএনও ও পৌর প্রশাসক সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, পৌরসভার নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার জায়গা নেই। প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে এবং এটি পরিদর্শন করে যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×