ছোট্ট রাস্তা মেরামতের বরাদ্দ গমেও নয়ছয়

ফাইল ছবি
দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:৩৮
পটুয়াখালীর দুমকীতে ৮০০ ফুটের একটি গ্রামীণ সড়ক ও মসজিদের মাঠে মাটি ফেলার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নে সম্প্রতি এই কাজ শুরু হয়। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের এই কাজটি শেষ হওয়ার কথা আগামী জুনে। এরই মধ্যে দুটি কাজেই অনিয়মের তথ্য জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনও এসবের সত্যতা মিলেছে।
জানা গেছে, মুরাদিয়া পঞ্চায়েতের বাজার থেকে আজাহার মৃধার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও পাশের আলেপ খাঁ বাড়ির জামে মসজিদ মাঠ ভরাটের ওই প্রকল্পে বরাদ্দ হয় আট টন গম। এলাকাবাসীর ভাষ্য, দুটি কাজেই নিয়ম লঙ্ঘন করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কাবিখা প্রকল্পের আওতায় লোকবল দিয়ে মাটি কেটে রাস্তার কাজ করার শর্ত থাকলেও সেখানে মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। দ্বিতীয় শর্তটি ছিল, রাস্তার দুই পাশে চার ফুট করে শোল্ডার রাখা, যাতে ভেঙে না যায়। কিন্তু পাশে শোল্ডার না রেখে মাটি কাটায় সামান্য বৃষ্টিতেই ওই রাস্তা ধসে পড়তে পারে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রকল্পের রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৮০০ ফুট, চওড়া ১২ ফুট। এটি ২ ফুট উঁচু করে মাটি ভরাট করার কথা। বুধবার পর্যন্ত ৬০০ ফুটের মতো রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পুরুত্ব ও প্রশস্ততার নির্দেশনাও মানা হয়নি। এমনকি আলেপ খাঁ বাড়ির জামে মসজিদের মাঠটি অনেক আগেই বালু দিয়ে ভরাট করেছে মসজিদ কমিটি। এ প্রকল্পের আওতায় সেখানে কোনো মাটিই ফেলা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। এর সিপিসি হন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ফোরকান। সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজিবুর রহমান ইমুকে। এ ছাড়া মোতালেব রাঢ়ী, শাহানাজ বেগম ও রেজাউল করিম এ কমিটির সদস্য।
রেজাউল করিমের ভাষ্য, তাঁকে যে কমিটির সদস্য করা হয়েছে, তা-ই জানেন না। সই দিতেও পারেন না তিনি, টিপসই দেন। অথচ কমিটির তালিকায় তাঁর নামে অন্য কারও সই দেওয়া।
অপর সদস্য মোতালেব রাঢ়ীর অভিযোগ, সই জাল করে তাঁকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তিনি জানতেনও না বিষয়টি। তাঁর স্মার্টকার্ড রয়েছে, অথচ পুরোনো এনআইডির কপি সত্যায়িত করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফোরকান কমিটির সঙ্গে জমা দিয়েছেন। ১৫ এপ্রিল এ বিষয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পের সিপিসি মোস্তাফিজুর রহমান ফোরকান সরকারি টাকা লোপাট করছেন। বারেক রাঢ়ী, খালেক মৃধা, নাসির মৃধা, ফারুক রাঢ়ীসহ কয়েকজনের ভাষ্য, জনগণের সুবিধার্থে সরকার রাস্তার কাজে টাকা ব্যয় করে। যেভাবে রাস্তার কাজ হয়েছে, এতে উপকারের চেয়ে দুর্ভোগ বাড়বে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটি পাশে ধসে পড়তে পারে।
প্রকল্পে আলেপ খাঁ বাড়ির জামে মসজিদের মাঠ ভরাটের কথা আছে। অথচ মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুর রহিম খাঁ বলেন, কমিটির অর্থায়নে দুই মাস আগে ড্রেজার দিয়ে মাঠ ভরাট করা হয়েছে। তারা সরকারি অনুদান পাননি। তবে ইউপি সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) হাফিজুর রহমান ফোরকান ১০ হাজার টাকা দানের আশ্বাস দিয়েছেন। রাস্তার কাজের বিল পেলেই ওই টাকা দেবেন বলে তাঁকে (রহিম খাঁ) জানিয়েছেন।
হাফিজুর রহমান ফোরকানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি, পরে কল করবে’ বলে সংযোগ কেটে দেন। এ বিষয়ে পিআইও মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এসব অনিয়মই যে নিয়ম– তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ড, ৮ মিনিট ৪১ সেকেন্ড ও ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের তিনটি অডিও রেকর্ড আছে। একটি রেকর্ডে তাঁকে বলতে শোনা গেছে, ‘আপনি যদি বলেন কাগজে-কলমে যে এস্টিমেট আছে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে– তাহলে তো তার জায়গাজমি বিক্রি করে কাজ করতে হবে।’ এই অডিওতে তাঁর অন্য পাশে ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য মো. ফিরোজ হোসেন (রেজা মেম্বার) ও উপজেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের। যদিও তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
পিআইও মোহাম্মদ আলীর ভাষ্য, কাজ শেষ হওয়ার পর ওই প্রকল্প পরিদর্শনে যাননি। এখনও চার টন গম ছাড় করা হয়নি। অনিয়ম পাওয়া গেলে তা আটকে দেবেন।
দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুজর মো. ইজাজুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েই তিনি প্যানেল চেয়ারম্যানকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকেছেন। কাজে অনিয়ম হলে তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- রাস্তা সংস্কার