সড়ক বিভাজকে গাছ রোপণ
মানুষ চায় ফলদ গাছ, সওজের ভিন্নমত

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড একসময় ছিল বৃক্ষশোভিত। আট কিলোমিটার সড়কটি এখন মরুভূমির রাস্তার মতো। স্থানীয় বাসিন্দারা চান, বড় ফলদ গাছ লাগানো হোক। প্রশাসনের তাতে সায় নেই। সম্প্রতি তোলা সমকাল
শরীফ উদ্দিন সবুজ, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৫৫ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০৯:৩৫
মানুষ চায় সড়ক-মহাসড়কে ছায়াদায়ী বড় বৃক্ষ থাক, প্রচণ্ড গরমের সময় যাতে গাছ তাপ শুষে নিতে পারে এবং ছায়া দেয়। বৃক্ষে যেন আশ্রয় নিতে পারে পাখি থেকে শুরু করে ছোট ছোট প্রাণ-পতঙ্গ। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সড়ক-মহাসড়কে বড় বৃক্ষ রাখার পক্ষে না। তারা মনে করে, সড়কের মাঝ বরাবর বড় গাছ থাকলে তার শিকড় রাস্তার ক্ষতি করে। একই সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টিতে গাছের ডাল ভেঙে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই রাস্তার মাঝখানে বা ডিভাইডারে সৌন্দর্যবর্ধক ছোট গাছই থাকা উচিত।
তবে বৃক্ষ রোপণে সওজের এ ভাবনা পাল্টে সড়ক-মহাসড়কে বড় আকারের ছায়াদায়ী ও ফলদ গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। নিজ বাড়িতে নিমের চারা বড় করে পরে তা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনের আইল্যান্ডে লাগিয়েছেন নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডের বাসিন্দা তানভীর আহাম্মেদ। সেসব নিমগাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। তানভীর আহাম্মেদ বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড এক সময় ছিল বৃক্ষশোভিত। গাছ থাকায় এ পথ দিয়ে চললে গরম লাগত না। কিন্তু এখন ৮ কিলোমিটার লিঙ্ক রোডের পরিবেশ সৌদি আরবের মরুভূমির রাস্তার মতো। যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে, বাইরে তাকাতেও কষ্ট হয়। বড় আকারের গাছ থাকলে এ রাস্তার পরিবেশ পাল্টে যাবে।
তানভীর আহাম্মেদ আরও বলেন, ‘সওজ রাস্তায় গুল্ম জাতীয় গাছ লাগায়। তারা যে আইল্যান্ড তৈরি করে, তার নিচে পাকা করে দেওয়া হয়। ফলে গাছের শিকড় মাটিতে যেতে পারে না। গাছ লাগানোর জায়গার প্রশস্ততাও খুব কম রাখা হয়। এ গাছগুলো কিন্তু পথকে শীতল করে না। এ ছাড়া বেশি পানিও ধরে রাখতে পারে না। তাই গত বছর লিঙ্ক রোডে এ গাছগুলো লাগানোর পর আমরা দেখলাম, প্রচুর গাছ মরে গেছে। এখন আবার সরকারি টাকা খরচ করে গাছ লাগানো হয়েছে। গাছ লাগানোর সরকারি নীতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। গাছের শিকড় যাতে মাটি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, সে ব্যবস্থা করা দরকার।’
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর বাসিন্দা কবি শাহেদ কায়েস। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেন হয়েছে। কিন্তু বিভাজক করা হয়েছে সিমেন্ট দিয়ে। কোনো আইল্যান্ড নেই। গাছ লাগানোর কোনো জায়গাই রাখা হয়নি। এটা কেমন কথা!
এসব বিষয়ে সওজের নারায়ণগঞ্জ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, আইল্যান্ডে বৃক্ষ লাগানো সওজের নীতিমালার মধ্যে নেই। রাস্তার মধ্যে ছোট গাছ লাগানোই আমাদের নীতিমালায় আছে। সড়ক-মহাসড়কের মাঝে বড় গাছ থাকলে ঝড়ের সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া গাছের শিকড় রাস্তা নষ্ট করে ফেলতে পারে। এ কারণে রাস্তার মাঝে বড় গাছ লাগানো হয় না। তবে রাস্তার পাশে বড় গাছ থাকতে পারে।
তাঁর বক্তব্যের সমালোচনা করে শাহেদ কায়েস বলেন, দুর্ঘটনা গাছের ডাল ভেঙে যেমন হতে পারে, আবার টিন উড়িয়ে এনে রাস্তায় ফেললেও হতে পারে। ঝড়ে বাতাসের যে গতি থাকে, তাতে রাস্তার মাঝের গুল্ম গিয়ে কোনো গাড়িতে পড়লে তাতেও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বেপরোয়া যানবাহন চালনা ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। ফলে সওজের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। বৃক্ষ একবার বসে গেলে তার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় খুব কম। অন্যদিকে গুল্ম কয়েক দিন পরপর মারা যায়। তারা তখন নতুন গুল্ম লাগায়। এটা দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। আবার রাস্তার মধ্যে সিমেন্টের বিভাজক বসালে তা দু’এক বছর পরপর ভাঙবে; রঙ করার খরচ দেখাবে। এসব কারণে তারা বড় গাছ লাগাতে আগ্রহী নয়।
পরিবেশ আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী সাদিয়া আফরোজ মুক্তি বলেন, যেখানে গাছ আছে সেখানকার চাইতে যেখানে গাছ নেই সেখানকার তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বেশি থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৪৬৫ কিলোমিটারের। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে রয়েছে ২৯ কিলোমিটার। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ২৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে পড়েছে ২২ কিলোমিটার। এত দীর্ঘ এলাকায় শুধু পরিকল্পিত গাছ লাগিয়ে গরমের সময় তাপমাত্রা কমিয়ে আনা যায়। তিনি সওজের নীতিমালা পরিবর্তন করে সড়ক-মহাসড়ক বৃক্ষশোভিত করার দাবি জানান।