ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

গবেষণা

বাড়ির আঙিনায় মৌবন, ৭০ রকমের ফুল ও মধু

বাড়ির আঙিনায় মৌবন, ৭০ রকমের ফুল ও মধু

চট্টগ্রাম নগরীর সারসন রোডে জয়পাহাড় হাউজিংয়ে প্রায় শত বছরের পুরোনো বাড়ি আনোয়ার নিকেতনে মাইনুল আনোয়ারের মধু গবেষণাগার। সম্প্রতি তোলা সমকাল

 সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫ | ০১:১৭ | আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ | ০৮:৫০

চট্টগ্রাম নগরীর সারসন রোডে জয়পাহাড় হাউজিংয়ে প্রায় শত বছরের পুরোনো বাড়ি ‘আনোয়ার নিকেতন’। ১০ কাঠা জমির চার কাঠাজুড়ে এই বাড়ি। সামনে ছয় কাঠার উঠান। সেখানেই নিজের শখের এবং সম্ভবত দেশের একমাত্র মধু গবেষণাগার গড়ে তুলেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ার। এ উঠানেই মৌমাছি, মৌচাক ও মধু নিয়ে দিন কাটে তাঁর। এ গবেষণাগারে আছে ৭০ রকমের ফুল ও মধু। আছে ২৫০ রকম ভেজাল মধুর নমুনাও। 

গত ৩ এপ্রিল গবেষক মাইনুল ঘুরে দেখালেন তাঁর গবেষণাগার। আঙিনার এক পাশে সুন্দরবনের বিভিন্ন জাতের গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট এক ম্যানগ্রোভ বন। সে বনে মাথা তুলেছে সুন্দরী, কালিলতা, গর্জন, গোলপাতাসহ নানা জাতের গাছ। অন্য পাশে ছোট্ট মৌবন। যেখানে আছে ১০টি মৌচাক। 

মাইনুল বললেন, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই মৌমাছি, মৌচাক ও মধুর এই গবেষণাগার গড়ে তুলেছি। দেশে অনেক গবেষণাগার আছে; কিন্তু শুধু মধু নিয়ে কোনো গবেষণাগার এটিই প্রথম। এটি তৈরি করতে ২০ বছর লেগেছে। এখানে এসে মৌমাছি, মৌচাক ও মধু সম্পর্কে সমন্বিত ধারণা পাবে যে কেউ। কোন মধু খেতে কেমন, কোন মধুর রং কী, কোন মধুর মৌচাক কেমন, সে মৌচাকে বসা মৌমাছি কেমন, কোন ধরনের গাছে চাক তৈরি করে মৌমাছি, কোন ফুলের মধু থেকে ভালো মধু হয়, কোন পাখির প্রিয় খাবার মৌমাছি– সব প্রশ্নের উত্তর আছে এ গবেষণাগারে। আমি তাই এটাকে বলি মৌমাছির জাদুঘর।’ 

শুধু আসল মধু নয়; ভেজাল মধু নিয়েও গবেষণা করেন মাইনুল। তিনি বলেন, ‘গবেষণাগারে প্রায় আড়াইশ রকম ভেজাল মধুর নমুনা আছে। আমি এগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি কোনটিতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মধুর স্বাদ কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা নিয়েও কাজ করেছি আমি।’ 
কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বনের পাশেই গবেষণাগার। বারান্দাসহ ছোট্ট তিনটি কক্ষ। সেগুলোতে সাজানো তিন শতাধিক মধুর পাত্র। আছে মধুর ফুল। যে গাছে মৌচাক হয়েছে, তার অংশবিশেষও আছে। এভাবেই সংরক্ষণ করা হয়েছে সুন্দরবনের প্রায় ৩০ প্রজাতির উদ্ভিদের নমুনা।

সুন্দরবনের উদ্ভিদ শত মাইল দূরের চট্টগ্রামে কেন আনলেন– এ প্রশ্নে মাইনুল বলেন, ‘গবেষণার কাজে নিয়মিতই সুন্দরবন যেতে হয়। কিন্তু সুন্দরবনে যেসব গাছে মৌমাছি বাসা বাঁধে, সেগুলো দেশের অন্য এলাকায় হয় না। তাই বছর পাঁচেক আগে সুন্দরবন থেকে কিছু উদ্ভিদের চারা ও বীজ এনে উঠানে রোপণ করি। এসব গাছ যেহেতু নোনা মাটি ও পানিতে জন্মায়, তাই সমুদ্র উপকূল থেকে লবণাক্ত মাটি ও পানি সংগ্রহ করে গাছগুলোতে দেওয়ার ব্যবস্থা এবং পরিচর্যা করেছি।’ মাইনুলের এই উদ্যোগ নিয়ে শুরুতে অনেকে নানা কথা বললেও এখন দেখতে মানুষ আসে দূরদূরান্ত থেকে। 

আরও পড়ুন

×