ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শর্ত ভঙ্গ করে খাজনা আদায়

শর্ত ভঙ্গ করে খাজনা আদায়

ফাইল ছবি

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫ | ২৩:৩০

কোরবানিকে সামনে রেখে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারেরা তিন-চারগুণ হাসিল বা খাজনা আদায় করছেন। তারা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ইজারা শর্ত মানছেন না। নীতিমালায় শুধু ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায়ের কথা থাকলেও বিক্রেতাকেও রেহাই দিচ্ছেন না তারা। এমনকি খাজনার রসিদে 
টাকার পরিমাণ লেখা হচ্ছে না। রাজশাহীর চারঘাটের পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
উপজেলায় ১৪টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে পশুরহাট একটি। নন্দনগাছী নামের এ হাট বসে প্রতি শুক্র ও সোমবার। নিমাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অবস্থিত এ হাটে ছাগল-ভেড়া কেনাবেচা হয়। প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার জন্য ২০০ টাকা খাজনা নির্ধারণ হয়েছে। এ ছাড়া গবাদি পশুর জন্য শুধু ক্রেতারাই খাজনা দেবেন বলা আছে। বাংলা ১৪৩২ অর্থবছরে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ টাকা দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান।

গত সোমবার হাটে গিয়ে দেখা যায় কোথাও খাজনা আদায়সংক্রান্ত কোনো নিয়মাবলি বা তালিকা সাঁটানো হয়নি। ক্রেতা-বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত খাজনার পরিমাণ জানতে পারছেন না। এ সুযোগে ছোট ছাগলের ক্ষেত্রে ৬০০ টাকা ও মাঝারি-বড় ছাগলের ক্ষেত্রে ৭০০-৮০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০-৭০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। উপজেলায় আর কোনো পশুর হাট না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতারিত হলেও ওই হাটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। 
হাটে ছাগল কিনতে এসেছিলেন চামটা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগল কিনেছেন। হাসিল বাবদ তাঁর কাছে ৬০০ টাকা চাওয়া হয়। একশ টাকা কম 
দিতে চাইলে ছাগল আটকে রাখে ইজারাদারের লোকজন। শেষ পর্যন্ত ৬০০ টাকা পরিশোধ করলেও ফাঁকা রসিদ দেওয়া হয়েছে। বিক্রেতাকেও ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। 
মিয়াপুর গ্রামের মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাড়ে ৯ হাজার টাকা দিয়ে ছোট একটা ছাগল কিনেছি। খাজনা দিতে হলো ৫০০ টাকা। বিক্রেতাও দিলেন ১০০ টাকা। প্রকাশ্যে ঠকানো হচ্ছে কিন্তু প্রতিকার নেই। অতিরিক্ত টাকা নিলেও রসিদের খাজনার জায়গাটি ফাঁকা রাখা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব না।’ 

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ইজারাদার কাউকে তোয়াক্কা করেন না। হাটের দিন পুরো এলাকা তাদের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। উপজেলায় একাধিক পশুর হাট না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা জিম্মি। অতিরিক্ত খাজনা নিলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে খাজনার দ্বন্দ্বে ক্রেতা-বিক্রেতাকে হেনস্থা করছে ইজারাদারের লোকজন।
নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হাট বসিয়ে সেখানে তিনগুণ খাজনা নেওয়া হলেও ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এমনটা তিনি শোনেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাটে তো সঠিক নিয়মে খাজনা নেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। অতিরিক্ত খাজনা নেওয়ার বিষয়ে কেউ কখনও অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ না পেলে কী ব্যবস্থা নেব!’
নন্দনগাছী হাটের ইজারাদার স্থানীয় ধর্মহাটা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ছাগলপ্রতি আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা খাজনা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে না। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারাও একটু খেয়াল রাইখেন আমাদের প্রতি, কারণ অনেক টাকা দিয়ে হাট নিয়েছি। নয়তো লোকসানে পড়তে হবে।’ 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ইজারাদারদের নির্দেশনা মেনে হাট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×