পরিত্যক্ত ফিল্মে জীবিকা

দেবিদ্বারে পরিত্যক্ত এক্স-রে ফিল্ম পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা সমকাল
সৈয়দ খলিলুর রহমান, দেবিদ্বার (কুমিল্লা)
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫ | ০১:০৮
এক সময় যেসব এক্স-রে ফিল্ম ফেলে দেওয়া হতো ডাস্টবিনে, সেগুলোকেই এখন নতুন জীবন দিচ্ছে দেবিদ্বার উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের মানুষ। কেউ ভাবেননি– এই রংহীন, ধোঁয়াটে চিত্রের পাতায় লেখা থাকতে পারে কর্মসংস্থানের গল্প।
ভৈষেরকোট গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছোট্ট ভবন। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সাধারণ কোনো ঘর। কিন্তু ভেতরে পা দিলেই দেখা মেলে এক ব্যতিক্রমী দুনিয়ার। যেখানে প্রতিদিন ঘষা হয় পুরোনো এক্স-রে ফিল্ম, ধুয়েমুছে তৈরি করা হয় নতুন পণ্য। প্রতিদিন সেখানে কাজ করেন স্থানীয় ২০-২২ জন শ্রমিক। তারা গড়ে তুলেছেন এমন এক উদ্যোগ, যেটি শুধু কাজ নয়, দিয়েছে আত্মমর্যাদা, দিয়েছে স্বপ্নের খোরাক।
এই স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন ভৈষেরকোট গ্রামের সন্তান আবুল হোসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিত্যক্ত এক্স-রে ফিল্ম সংগ্রহ করেন তিনি। সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে ঘষে প্রিন্ট তুলে ফেলেন, ধুয়েমুছে বানিয়ে ফেলেন একদম নতুনের মতো। তারপর রোদে শুকিয়ে বিক্রি করেন ঢাকার একটি কারখানায়। সেখানে ফিল্মগুলো কেটে তৈরি হয় গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, যেমন– কলারের স্টিফনার, প্যাকেজিং মেটেরিয়াল।
শুরুতে আবুল হোসেনের এই কাজ নিয়ে উপহাস করতেন অনেকে। কেউ কেউ বলতেন, ফিল্ম ঘষে কেউ জীবিকা গড়তে পারে নাকি! কিন্তু তিনি দমে যাননি। পাশে পেয়েছেন ভাইয়ের ছেলে মনিরুল ইসলামকে, পেশায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী। তাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখন রূপ নিয়েছে দুটি কারখানায়– একটি গ্রামে, অন্যটি ঢাকায়। কাজ পেয়েছেন প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষ।
মনিরুল বলেন, পরিত্যক্ত ফিল্ম ঘষেও যে আয় করা যায়, শুরুতে কেউ বিশ্বাস করত না। কিন্তু এখন দেখুন, একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৮০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন, আর আমরা রপ্তানি উপযোগী পণ্য তৈরি করছি।
উদ্যোগ সম্প্রসারণে কুমিল্লা বিসিক অফিসে যোগাযোগ করেছেন মনিরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির ডিজিএম মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এটি ব্যতিক্রমধর্মী ও সম্ভাবনাময় একটি প্রকল্প। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও স্বল্প সুদে ঋণের মাধ্যমে সহযোগিতা করব।’
- বিষয় :
- শ্রমিক