ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেও কমছে না মনুতীরের আতঙ্ক

হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেও কমছে না মনুতীরের আতঙ্ক

মৌলভীবাজারের বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে রাজনগর এলাকার এ অংশ। যেকোন মুহূর্তে বিলীন হবে নদীতে। ছবি: সমকাল

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫ | ০১:৫৮

চার বছর ধরে মনু নদ ঘিরে তীর রক্ষা ও বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা দৃঢ় করতে চলছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এত অর্থ আর সময় ব্যয়ের পরেও বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি থেকে স্থানীয়দের মুক্ত রাখতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্টরা। চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের ধারা এবং স্থানীয়দের তথ্য বলছে, কচ্ছপগতির প্রকল্পের কারণে বাঁধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের ফায়দা হচ্ছে ঠিকই।

চলমান প্রকল্পের কাজ মন্থরগতিতে চলমান। এতে মনুতীরের রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ বর্ষায় দুর্ভোগের আশঙ্কায় আতঙ্কিত। ওই দুই উপজেলার অন্তত ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এই আতঙ্কের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

বর্ষা সামনে রেখে এবারও একই ভয় ভর করেছে স্থানীয়দের মাঝে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে মনু নদের উন্নয়নে ৯৯৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। এর মধ্যে রয়েছে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার, ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক বসানো, গাইডওয়াল নির্মাণ, চর খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। গত চার বছরে এই প্রকল্পের ৫৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

মনুপারের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকল্পের ধীরগতির কারণে রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধু, আদিনাবাদ, উজিরপুর, কান্দিরগুল, হরিপাশা, কামারচাক ইউনিয়নের কালাইকোনা, কুলাউড়ার পৃথিপাশা ইউনিয়নের কলির কোনা, রাজাপুর ও সিকরিয়া এলাকার মানুষ নদীভাঙন ও বন্যাঝুঁকিতে আছেন।

রাজনগরের একামধু এলাকার বাসিন্দা সুলেমান মিয়া জানান, ইদানীং অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে মনু নদ টইটম্বুর। এতে একামধুসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধের মাটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এ এলাকার ১১০ মিটার জায়গায় ব্লক বসানোর কাজ না হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা।

এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্রে জানা যায়, মনু নদের তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে বেশ কিছু জমি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় অধিগ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনার দখল ছাড়ছেন না। স্থানীয়রা আরও জানান, কয়েক দিন আগে অবিরাম বৃষ্টির প্রভাবে ও উজানের ঢলের পানিতে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তখন ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছেন।

অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ সমকালকে বলেন, বোর্ডের পরিসংখ্যান মতে মনু বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের রাজনগরে দুটি ও কুলাউড়ায় একটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। বন্যা ও ভাঙন মোকাবিলায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় অনেকে জমির দখল ছাড়ছেন না। এতে মনুতীরের কিছু স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিলম্ব হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অন্তরা সরকার সমকালকে বলেন, মনু নদের তীর রক্ষা বাঁধের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মালিকানার সপক্ষে ডকুমেন্টসহ দরখাস্ত করলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় বিষয়টি দ্রুত এগোবে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক ছয়টি চেক হস্তান্তর করেছেন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। 

আরও পড়ুন

×