ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রামে গ্যাসসংকট

চুলা জ্বলছে না, চলছে না কারখানাও

চুলা জ্বলছে না, চলছে না কারখানাও

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ | ২১:৫৯

বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা। পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে যান নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার গৃহিণী সানজিদা আক্তার। দেখেন, চুলায় আগুন জ্বলছে না। পরে হোটেল থেকে সকালের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। দুপুরেও খেতে হয় হোটেল থেকে। হোটেলও খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইন। একই অবস্থা চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। আকস্মিক গ্যাস সংকটের কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক উভয় খাতের গ্রাহকেরা। 

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলেছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান টার্মিনালে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাহাজ থেকে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। 

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল আজম খান বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকায় মহেশখালীতে এলএনজিবাহী জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে প্রতিদিন ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট পেতাম, সেটা এখন ১৬০-১৭০-এ নেমে এসেছে। এজন্য সংকট হচ্ছে। আশা করছি, শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ 

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) হিসাব মতে, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গত ১৫ জুন সকাল আটটা থেকে ১৬ জুন সকাল আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ২৪২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা ছিল ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় মাত্র ৩০ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে- রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বাড়বকুন্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র। 

এছাড়া সরকারি বেসরকারি দুটি সার কারখানার চাহিদা ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৪৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪১ দশমিক মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে সরকারি চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। 

গত বুধবার দুপুর থেকে নগরীর শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন আবাসিক এলাকায় গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর কিছু এলাকায় বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বাসা-বাড়ির সংযোগে গ্যাসের চাপ কমে যায়। রাত ১২টার পর সীমিত আকারে সরবরাহ শুরু হলেও ভোর হওয়ার আগেই আবার বন্ধ হয়ে গেছে। জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার গৃহিণী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি গ্যাস নেই। দুপুরেও রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

×