সীতাকুণ্ড ইয়ার্ডে চোরাই লাইটারেজ জাহাজ কাটার ধুম সিন্ডিকেটের

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির পরিত্যক্ত শিপইয়ার্ডে কাটা হচ্ছে চোরাই পথে আনা অবৈধ জাহাজ সমকাল
এম সেকান্দর হোসাইন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২৩:২৯
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিপইয়ার্ডে চোরাইপথে লাইটারেজ জাহাজ এনে কেটে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ছয় মাসে অবৈধভাবে শতাধিক জাহাজ কেটেছে মো. হামিদের নেতৃত্ব সাত-আটজনের সিন্ডিকেট। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারালেও প্রশাসন নির্বিকার। এতে পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িত ইয়ার্ড মালিকরা। তাদের ভাষ্য, সরকারের ইজারা দেওয়া ইয়ার্ডে অবৈধভাবে জাহাজ কাটার কোনো সুযোগ নেই।
কয়েক বছর ধরে ডলার সংকট ও মন্দার প্রভাব পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্পে। আগে ১৫৫টি ইয়ার্ড থাকলেও ধুঁকে ধুঁকে এখন ৪০টিতে কার্যক্রম চলছে। তিন বছর ধরে হংকং কনভেনশনের শর্ত মেনে মাত্র ১২টি ইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তর হয়েছে। সেগুলোতে গত ২৬ জুন থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা হচ্ছে। বাকিগুলো হয় পরিত্যক্ত, নয় বন্ধ।
অভিযোগ উঠেছে, পরিত্যক্ত ও বন্ধ থাকা কয়েকটি ইয়ার্ডে চোরাইপথে লাইটারেজ জাহাজ এনে অবৈধভাবে কেটে লোহাগুলো বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। ছোট হওয়ায় পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই ইয়ার্ডে একটি করে জাহাজ কাটা হচ্ছে। এভাবে গত ছয় মাসে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ কেটেছে সিন্ডিকেট। জাহাজপ্রতি তাদের দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ থাকে বলে জানিয়েছেন কাটার সঙ্গে জড়িতরা।
একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার জন্য ইয়ার্ডে আনার আগে শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পাঁচ দপ্তরের অনুমতি লাগে। কিন্তু সরকারি লিজের ইয়ার্ডগুলো অনুমতির ধার ধারছে না।
সরেজমিন পরিত্যক্ত শীতলপুর, সোনাইছড়ি ও মাদামবিবিরহাট এলাকার একাধিক ইয়ার্ডে চোরাইপথে আনা লাইটারেজ জাহাজ কাটতে দেখা যায়। ২০০ থেকে ৩০০ টনের জাহাজগুলো প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে। সোনাইছড়ির তেঁতুলতলায় পরিত্যক্ত রহমানিয়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গত বুধবার একটি লাইটারেজ জাহাজ কাটতে দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম জানান, গত বছরের মার্চে রহমানিয়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে পুলিশ অবৈধ মালপত্র জব্দ করেছিল। সে সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে পার পেয়েছিল। এখনও অবৈধ কার্যক্রম চলছে। শুধু রাজনৈতিক হাতবদল হয়েছে বলে জানান তিনি।
লাইটারেজ স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা চক্রের নেতৃত্বে থাকা মো. হামিদের নম্বরে কল দিলে পরিচয় পেয়ে ফোনটি সহযোগী মো. নাছিরুজ্জামানকে ধরিয়ে দেন। নাছিরুজ্জামান কয়েকটি ছোট স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘লাইটারেজ জাহাজগুলো বাংলাদেশে তৈরি। এগুলো তৈরির সময়ই মালিকরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছেন। এ জন্য ইয়ার্ডে কাটার ক্ষেত্রে কোনো অনুমতির দরকার পড়ে না।’
ফেরদৌস স্টিল শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, পরিত্যক্ত ইয়ার্ডগুলোতে লাইটারেজ জাহাজ কেটে বিক্রি করা অবৈধ। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না হলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
সীতাকুণ্ডের ইউএনও ফখরুজ্জামান বলেন, ‘লিজের ইয়ার্ডে লাইটারেজ জাহাজ কীভাবে কাটা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। নিয়মের বাইরে কারও কিছু করার সুযোগ নেই।’
- বিষয় :
- জাহাজ