চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে জুড়ীতে প্রত্নতত্ত্ব দল

চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ননিদর্শন অনুসন্ধানে জুড়ীতে প্রতিনিধি দল- সমকাল
মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া প্রতিনিধি এবং জুড়ী সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০ | ১১:২২ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ | ১২:৪৫
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল দিঘীরপার এলাকায় চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ননিদর্শন অনুসন্ধান করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে রোববার দলটি দ্বিতীয় দিনের মতো অনুসন্ধানে চালায়।
অনুসন্ধানকালে স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্যদের সঙ্গে কথা বলার পর দলটি সাংবাদিকদের জানায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ননিদর্শনের কোনো নিদর্শন খুঁজে পাননি। তবে এ সময় জগদিশ চন্দ্র শর্মা নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে সংগ্রহে থাকা ২০ বছরের পুরনো কিছু পুঁতির পাথর পাওয়া গেছে।
প্রতিনিধিদলে আরও আছেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার মো. শাহিন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গবেষণা সহকারী ওমর ফারুক, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা। এ সময় জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এলাকা পরিদর্শন, অনুসন্ধান ও মাঠ জরিপ করে পুরাকীর্তির কিছু আলামত সংগ্রহ করেন তারা। তবে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদল ধারণা করছে, এই এলাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। তবে প্রাচীন কোনো সভ্যতা ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রের নিদর্শন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জগদিশ চন্দ্র শর্মার স্ত্রী সাগরনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাশিনী মোহান্ত প্রতিনিধি দল ও গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, '২০ বছর আগে আমাদের বাড়ির একটি পুরাতন পুকুর সংস্কারকালে একটা ছোট পাতিলের মধ্যে বেশ কিছু পুঁতির পাথরগুলো পাওয়া যায়। এটা দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ায় আমরা সংরক্ষণ করে রাখি। এখন যদি এটা পরীক্ষা করার পর নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয় বা কোনো কাজে আসে তাহলে সেটা হবে আমাদের সফলতা।'
এদিকে অনুসন্ধানের তৃতীয় দিনে সোমবার মৌলভীবাজারের রাজনগর পাঁচগাও ইউনিয়নের পশ্চিম ভাগ গ্রাম ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ইন্দ্রেশ্বর এলাকায় পাহাড়ী অঞ্চল পরিদর্শন ও সার্ভে করবে প্রতিনিধি দলটি। এর আগে অনুসন্ধানের প্রথম দিনে শনিবার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ভাটেরা তাম্রফলক পরিদর্শন করে দলটি। এ সময় তারা পুরাতন মাটির পাতিল ও ইটের টুকরো আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেন। ভাটেরা টিলায় বড় একটি দীঘি রয়েছে। পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে স্থানীয়রা শুনেছেন, এই রাজবাড়িতে সাত ভাই ছিলেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ রাজা ছিলেন ঈসান দেব।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, 'আমাদের জরিপ ও অনুসন্ধান আরও কয়েকটি জায়গায় চলবে। চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক স্থান বলার এখনো সময় আসেনি। তবে মৌলভীবাজারের ভাটেরা টিলা, রাজনগর পশ্চিমভাগ ও জুড়ীর সাগরনাল- এ তিনটি এলাকায়ই প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতার অনেক নিদর্শন ছিলো- সেটা আমাদের জরিপকালে বুঝেছি। এর সঠিকতা প্রমাণের লক্ষ্যে অধিকতর গবেষণা করতে হবে।'
এর আগে গত ১৫ জুলাই 'চন্দ্র বংশীয় রাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত কথিত শ্রীহট্টের চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে সরেজমিন জরিপ ও পরিদর্শন ' করে প্রতিবেদন পাঠাতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালককে চিঠি দেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক মো. আমিরুজ্জামান।
- বিষয় :
- মৌলভীবাজার
- জুড়ী
- প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান
- সিলেট
- জুড়ী