ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ০৫:২৪ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ০৬:১০

বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরকারি দলের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে এক পক্ষ পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এই সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে জিটিভির ক্যামরাপার্সন রাজু আহম্মেদ, ডিএসবি পুলিশের কনেস্টবল রজমান আলী ও আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যাক্তির অবস্থা গুরুতর।

জানা যায়, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তার হেফাজতে চারমাথা বাসটার্মিনাল এলাকায় রাখেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে চারমাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হয়। তারা যেকোন মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেয় এবং পরিবহন শ্রমিকদের প্রত্যেক হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে বলেন।

এসময় একদল পুলিশ চারমাথায় অবস্থান নেন। পুলিশের তরফ থেকে আমিনুলকে সমঝোতায় প্রস্তাব দিলে আমিনুল পুলিশকে জানিয়ে দেয়- তারা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে অপর পক্ষকে প্রতিহত করবেন। এরই এক পর্যায়ে আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই লাঠি মিছিল শুরু করে। এ সময় মোহন গ্রুপের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহন গ্রুপের লোকজন লাঠি নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। ধাওয়ায় তারা পিছু হটে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে ভাংচুর শুরু করে। তারা এলোপাতাড়ি যানবাহন ভাংচুর করা ছাড়াও আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এদিকে দু’পক্ষের সংর্ষের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ ছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল (ওয়াচার) রমজান আলীকে (৫৫) ও আনোয়ার হোসেন (৪০) নামে একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আহতদের মধ্যে রাজু আহম্মেদ, রজমান আলী ও আনোয়ার হোসেনকে শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অন্যরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।

এ ঘটনায় পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষের পর চারমাথা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুলিশ কনেস্টবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে।

অপরদিকে এ ঘটনার পর দুপুর ২টার দিকে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম। মঙ্গলবার বিকেল তিনটা থেকে বগুড়া জেলায় এবং কাল বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গ জুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন তিনি। তার প্রতিপক্ষ মনজুরুল আলম মোহনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এই ধর্মঘটের আহ্বান করেন বলে জানান।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হলে কোনো পক্ষকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন

×