নারায়ণগঞ্জ দেড়শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল
ইনজেকশন পুশ ও কাটাছেঁড়া সেলাই করেন নৈশপ্রহরী

এক রোগীকে ইনজেকশন দিচ্ছেন আবদুর রশিদ- সমকাল
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২১ | ১১:০০
আবদুর রশিদ নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া নৈশপ্রহরী। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি ওই হাসপাতালে কাজ করছেন। পিনা অ্যাসোসিয়েট নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবদুর রশিদসহ মোট ৩০ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। দীর্ঘ সময় হাসপাতালে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজের সুবাদে ইনজেকশন দেওয়া, কাটাছেঁড়া সেলাইয়ের কাজ রপ্ত করেন তিনি। রাতে দায়িত্ব পালনকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তিনি এসব কাজ করেন। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। এতে সমালোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে আবদুর রশিদ ও ঘটনার সময় দায়িত্ব পালন করা ব্রাদারকে শোকজ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় মারামারির ঘটনায় দুই যুবক আহত হয়। তাদের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিলে তাতে উল্লিখিত ইনজেকশন ফয়সাল নামে এক যুবককে পুশ করেন আবদুর রশিদ। ওই সময় ফয়সালের সঙ্গে থাকা কেউই বুঝতে পারেননি আবদুর রশিদ ব্রাদার নন, হাসপাতালের নৈশপ্রহরী। ইনজেকশন পুশ করার ছবি ফয়সালের সঙ্গে থাকা অন্যরা তুলে ফেসবুকে আপলোড করেন। এর পরই বিষয়টি সবার নজরে আসে।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, রশিদের দায়িত্ব হলো চিকিৎসকরা ডিউটি শেষে অফিস থেকে বের হলে তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ আছে কি-না তা দেখা। হাসপাতালের চারপাশ ঘুরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনি তা না করে জরুরি বিভাগে ব্রাদারদের সঙ্গে বসে আড্ডা দেন। এ কারণে তিনি ইনজেকশন পুশ করা এবং কাটাছেঁড়া সেলাই করা শিখেছেন। সম্প্রতি হাসপাতালের অনেকের চোখেই পড়েছে রশিদ জরুরি বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের ইনজেকশন পুশ ও কাটাছেঁড়া সেলাই করছেন এবং রোগীদের কাছ থেকে চা-পানের খরচের নামে টাকা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, নৈশপ্রহরীরা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করার কারণে সম্প্রতি হাসপাতালের একাধিক জানালার থাই গ্লাস চুরি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি ও ধুলোবালি ভেতরে প্রবেশ করে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে জানালা চুরি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে নৈশপ্রহরী আবদুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিনা অ্যাসোসিয়েট নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে এই হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়, ওটি বয় ও চারজন নৈশপ্রহরীসহ আমরা ৩০ জন চাকরি পেয়েছি। ছয়-সাত মাস পর পর আমাদের বেতন হয়। এ জন্য হাসপাতালের ব্রাদারদের কাছ থেকে শিখে নিয়ে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের সেলাই ও ইনজেকশন পুশ করে দিতাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিষেধ করায় এখন আর এ ধরনের কাজ করি না। তাছাড়া অনেক সময় ব্রাদাররা এদিক-সেদিক গেলে এবং ওই সময় গুরুতর কোনো রোগী এলে রোগীদের স্বার্থেই তাদের সেবা দিয়ে থাকি।
নারায়ণগঞ্জ দেড়শ’ শয্যা জেনারের হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ওই নিরাপত্তা প্রহরী এবং ওই সময় দায়িত্বে থাকা ব্রাদারকে শোকজ করেছি। শোকজের জবাব এলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে ওই নিরাপত্তা প্রহরীকে চাকরিচ্যুত করা হবে। তিনি আরও বলেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু ইনজেকশন পুশ ও কাটাছেঁড়া সেলাইয়ের কাজ নার্স অথবা ব্রাদাররাই করে থাকেন।