ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ইউএনওর পিয়নের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ইউএনওর পিয়নের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

অভিযুক্ত জাকির হোসেন

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৯ | ০৮:২২ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ | ০৮:২৪

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১২) তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। রোববার রাতে সোনাইমুড়ী উপজেলার ২নং নদোনা ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় দুই দিন আগে ইউএনওর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন বিচার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রীটির বাবা। ঘটনার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় বিচার না পেয়ে হতাশা হয়ে পড়েছে ছাত্রীটির পরিবার। 

উপজেলার নদোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী জানায়, রোববার রাতে সে পাশের বাড়িতে টিভি দেখতে যাচ্ছিল।  এ সময় শাকতলা গ্রামের কাজী বাড়ির জালাল আহমেদের ছেলে ও সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের অফিস  সহায়ক (পিয়ন) জাকির হোসেন তার মুখে কাপড় গুজে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় সে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করলে তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে তার পরিবারে খবর দিলে তার দাদি গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় জাকির পালিয়ে যায়।

ছাত্রীটির বাবা-মা জানান, ঘটনাটি তারা স্থানীয় নদোনা ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. শাহজাহানকে জানালে তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। সোমবার সকালে মেয়েকে নিয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা পালের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইউএনও তাদের মঙ্গলবার কার্যালয়ে দেখা করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রীটিকে নিয়ে তার বাবা-মা ইউএনওর সঙ্গে দেখা করেন। 

ছাত্রীটির মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউএনও তাদের গালমন্দ করেন এবং এক পর্যায়ে অভিযুক্ত জাকির হোসেন ও মেয়েটিকে মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলেন। এ সময় ছাত্রীটি পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলেও তিনি ছাত্রীটির কথা বিশ্বাস না করে জাকিরের কথা বিশ্বাস করেছেন। এক পর্যায়ে ইউএনও এ ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসা করার পরামর্শ দিয়ে তাদের কক্ষ থেকে বের করে দেন। ঘটনার পর বাড়ি ফিরে বিষয়টি ইউপি সদস্য শাহজাহানকে জানালে তিনি আগামী শুক্রবার সালিশ বৈঠকে বসার দিন ধার্য্য করেন। 

ওই ছাত্রীর বাবা জানান, ঘটনার পর থেকে তার মেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়া ও বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

ইউপি মেম্বার শাহজাহান বলেন, বিষয়টি তার বাবা-মা আমাকে জানালে ইউএনওর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেই। ইউএনও বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসা করার জন্য বললে আমি আগামী শুক্রবার এ নিয়ে বসার সিদ্বান্ত নিয়েছি। 

বিষয়টি সালিশ যোগ্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়েটির পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা পাল ছাত্রীটির বাবা-মায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সোমবার ছাত্রীটির বাবা-মা একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার আমি ছাত্রী ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা একেক সময় একেক কথা বলছেন। কখনও বলেন ধর্ষণ করেছে, কখনও বলেন ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। এছাড়া জাকিরের পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির  পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এরপরেও তিনি মেয়েটির অভিভাবককে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ঘটনা সত্য হলে জাকিরকে তার চুক্তিভিত্তিক চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। 

তবে ইউএনও বরাবর করা ধর্ষণের লিখিত অভিযোগটি সোনাইমুড়ী থানায় পাঠানো হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি আবদুস সামাদ। তিনি জানান, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরও পড়ুন

×