ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী গ্রেপ্তার, সন্তানদের খাবার দিল পুলিশ

স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী গ্রেপ্তার, সন্তানদের খাবার দিল পুলিশ

গ্রেপ্তার আসামির বাড়িতে খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির পুলিশ

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১ | ০৪:১৬ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২১ | ০৪:৫৩

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বামীর করা ঋণে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মরিয়ম বেগমকে (৩৮) গ্রেপ্তারের পর তার তিন শিশু সন্তানকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার দুপুরে মঠবাড়িয়া থানার এএসআই জাহিদ এ খাদ্য সহায়তা দেন। মরিয়ম বেগম উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে সুতা জাকিরের স্ত্রী।

থানা সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম বেগমের স্বামী জাকির হোসেন ব্যবসার জন্য স্ত্রীকে জামিনদার করে মঠবাড়িয়া ব্রাক ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ ঋণের তথ্য গোপন রেখে বিভিন্ন এনজিও থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেন জাকির। পাশাপাশি গোপনে সব জমিজমাও বিক্রি করে দেন। এরপর ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করে মঠবাড়িয়া থেকে স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে ঋণের দায়ে জাকির ও তার প্রথম স্ত্রী মরিয়মের বিরুদ্ধে পিরোজপুর অর্থ ঋণ আদালতে এনজিওর পক্ষ থেকে মামলা রুজু করা হয়।

এদিকে মরিয়ম বেগম মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিন সন্তান- শারমিন আক্তার (১৮), রুম্মান (১১) ও জান্নাতি আক্তারকে (৯) নিয়ে তার নানা বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে থেকে অন্য মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ও কাঁথা সেলাই করে কোনোরকমে সংসার চালাতে থাকেন।

এরই মধ্যে ওই এনজিও‘র মামলায় আদালত থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় মরিয়ম বেগম ও তার স্বামীর নামে। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকায় সোমবার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মরিয়ম বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে, মরিয়ম বেগমের সংসারের অবস্থা দেখে পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদের মনের ভেতরটা নাড়া দিয়ে ওঠে। মরিয়ম বেগমকে থানায় নিয়ে যাবার সময় তার সন্তানরদের কান্নারত কিছু কথা ‘আমরা এখন থাকবো কিভাবে, খাবো কি, ঘরেতো কিছুই নেই, আমাদের মাকে ছেড়ে দেন, মা কিছু করে নাই'  এএসআই জাহিদের কানে বিষাদের সুরের মতো বাজতে থাকে। পরে তিনি মরিয়ম বেগমের সন্তানদের জন্য এক মাসের ১৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২কেজি পিয়াজ , ২কেজি সয়াবিন তেল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ, সাবানসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হন।

এ বিষয়ে এএসআই জাহিদ জানান, মরিয়ম বেগম এতো অসহায় না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেন না। তার অবর্তমানে এই সংসারের আহার জোগার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যতদিন মরিয়ম বেগম জেল হাজতে থাকবেন, ততদিন তার রেশন দিয়ে এই পরিবারকে তিনি সহায়তা করে যাবেন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

×