ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

কোনো বাধা মানবো না

দুই হাত ছাড়াই এগিয়ে চলেছেন জাহিদুল

দুই হাত ছাড়াই এগিয়ে চলেছেন জাহিদুল

প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে যাননি যশোরের জাহিদুল ইসলাম, বরং অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে লেখাপড়া থেকে শুরু করে খেলাধুলা- সবকিছুই রপ্ত করে চলেছেন তিনি- সমকাল

তৌহিদুর রহমান, যশোর

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৪:৪৮

দুটি হাত নেই, তাতে কী? অদম্য সাহসিকতা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছেন জাহিদুল ইসলাম। কারও গলগ্রহ হয়ে নয়, আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বাঁচতে-সমাজকে আলোকিত করতে চান তিনি। ইতোমধ্যে এর নজিরও স্থাপন করেছেন। দুটি হাত না থাকলেও সাইকেল চালানো, খেলাধুলা, সাঁতারকাটাসহ দৈনন্দিন সব কাজ করছেন স্বাভাবিকভাবে। সুন্দর লেখা আর পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় তিনি প্রশংসিত হয়েছেন সবার কাছে। স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার।

জাহিদুল ইসলাম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের লাউড়ী গ্রামের মাহাবুবুর রহমান ও রাশিদা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে। ২০০৮ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যুৎস্পর্শে দুটি হাতই হারান জাহিদুল। সেই থেকে অনেক বাধা পেরিয়ে ইচ্ছাশক্তির বলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন তিনি। বর্তমানে পাশের ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়েন।

জাহিদুলের মা রাশিদা বেগম জানান, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট। জাহিদুল ছোট থেকে কিছুটা ডানপিটে স্বভাবের। দুর্ঘটনায় হাত হারানোর পর বসে বসে কত কেঁদেছি রাতের পর রাত। জাহিদুলের হাত না থাকায় কোনো কোনো প্রতিবেশী তাকে পছন্দ করত না। সমবয়সীরা তার সঙ্গে খেলত না। একপর্যায়ে জাহিদুলের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বাড়িতে দুই হাতের কাটা অংশে কলম চেপে ধরে খাতায় লেখার চেষ্টা করে সে। আস্তে আস্তে লিখতে শেখে সে। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছাশক্তি দেখে তাকে আমরা লাউড়ী রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করি। এখন নিজের ইচ্ছা ও যোগ্যতায় সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে তার নিজের কাজ নিজেই করতে পারে। জামা-প্যান্ট নিজেই পরতে পারে। তবে জামার বোতাম ও প্যান্টের চেইন আটকাতে পারে না। খাবার মাখতে পারে না। খাবার মেখে দিলে চামচ দিয়ে নিজে নিজে খায়। লেখাপড়া করলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। জাহিদুলের বাবা স্থানীয় একটি ইটভাটার ম্যানেজার। তার আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। জাহিদুল লেখাপড়া করে একটি চাকরি পেলে সমাজের আর দশটা প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েও তাকে অনুসরণ করতে পারবে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। দুটি হাত না থাকলেও সাইকেল চালানো, খেলাধুলা, সাঁতারকাটাসহ দৈনন্দিন সব কাজ করতে পারি। ছোটবেলা থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা ও সার্বক্ষণিক মায়ের সহযোগিতা পেয়ে হাত না থেকেও সব কাজ শেখা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জাহিদুল বলেন, পড়াশোনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করতে চাই। এ ছাড়া কোনো ক্রিকেট ক্লাবে প্রতিবন্ধী কোটায় খেলার স্বপ্ন দেখি। সেই সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড চালাতে চাই।

জাহিদুলের বন্ধু সোহাগ হোসেন বলেন, জাহিদুল তার দুই হাতের কনুইয়ের নিচ দিয়ে কলম চেপে ধরে আমাদের চেয়ে সুন্দরভাবে লেখে। পড়াশোনাতেও সে ভালো। পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭৫ ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতোই সেও খেলাধুলাসহ সব প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। হাত না থাকায় তার মনে বিন্দুমাত্র দুঃখও নেই। সে সব সময় হাসিখুশি থাকে।

প্রতিবেশী আবু হাসান জানান, এলাকায় জাহিদুলকে সবাই বিস্ময়বালক হিসেবে চেনে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

মনিরামপুরের ইউএনও সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, জাহিদুলের প্রতিভায় মুগ্ধ প্রতিবেশী ও তার বন্ধুরা। এই সমাজের জন্য অনুকরণীয় জাহিদুল। তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা সরকারিভাবে চেষ্টা করছি। 

আরও পড়ুন

×