ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক

শহীদের তালিকায় জীবিতরা

শহীদের তালিকায় জীবিতরা

সুমন চৌধুরী, বরিশাল

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২১ | ১২:০০

বরিশালের হিজলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিনের কাছে সম্প্রতি তার এক ঘনিষ্ঠজন ফোন করে জানতে চান, তিনি কবে মারা গেলেন। এমন প্রশ্নে বিব্রত হন এই মুক্তিযোদ্ধা। ওই ঘনিষ্ঠজন তার কাছে ফোন করার কারণ, উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পত্তনিভাঙ্গা জোনাল মার্কেটে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে শহীদদের তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে মহিউদ্দিনের নাম!

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নবনির্মিত এ স্মৃতিফলকে জীবিত এবং মুক্তিযুদ্ধের পরে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দেওয়া হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে।

মো. মহিউদ্দিন বলেন, ওই স্মৃতিফলকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যে ৪০ জনের রয়েছেন, তার মধ্যে ১৬ জন এখনও জীবিত আছেন। হিজলা উপজেলায় হরিনাথপুর ইউনিয়নে সেকান্দার আলী নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তা ছাড়া স্মৃতিফলকে প্রায় বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার নামের বানান ভুল লেখা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আরও বলেন, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুস সাত্তার দুই সপ্তাহ আগে স্মৃতিফলকের বিষয়টি তাকে জানান। পরে সেখানে গিয়ে দেখতে পান স্মৃতিফলকে শহীদ হিসেবে ইউনিয়নের ৪০ মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। সেদিন স্মৃতিফলক নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেওয়া হলে ফোন রিসিভ করেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। তাকেও বিষয়টি জানানো হয়। এরপর নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সুখদেব বিশ্বাসকে এটি সংশোধন করতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়নি।

গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চরপত্তনিভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মো. দলিল উদ্দিন জানান, স্মৃতিফলকে শহীদদের তালিকায় তার নাম রয়েছে ১১ নম্বরে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্বজনরা তাকে ফোন করা শুরু করেন। এতে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এ কাজে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

হিজলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আমির হোসেন তালুকদার জানান, এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরই নয়, জাতির জন্যও অত্যন্ত লজ্জাজনক।

এলজিইডির হিজলা উপজেলা প্রকৌশলী সুখদেব বিশ্বাস জানান, মাস খানেক আগে তিনি এ উপজেলায় যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে স্মৃতিফলক অপসারণ করে নতুন স্মৃতিফলক স্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু কেন তা করা হয়নি সেটি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

পদাধিকার বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ তাকে জানানওনি। তবে যারাই কাজটি করেছেন, তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। 

আরও পড়ুন

×