ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

৫০ বছর পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, তিন হাজার মানুষকে আপ্যায়ন

৫০ বছর পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, তিন হাজার মানুষকে আপ্যায়ন

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ | ০৪:১৯ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ | ০৯:১৯

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন শহীদ গোলজার হোসেন মৃধা। এই আনন্দে তিন হাজার মানুষকে মধ্যাহ্নভোজ করিয়েছে তার পরিবার। সেই সাথে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ব্যতিক্রম এ আয়োজনের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ।

বুধবার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ৯৭ নং গোয়ালগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল এ গণভোজের আয়োজন করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণি-পেশার তিন হাজার মানুষ অংশ নেন।

শহীদ গোলজার হোসেনের ছোট ভাই মো. আব্দুস সালাম মৃধা বলেন, ‘আমার ভাই গোলজার হোসেন আলিমের ছাত্র থাকাবস্থায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একাত্তর সালে খান শিহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার উলপুরে পাকসেনাদের সম্মুখযুদ্ধে বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে ওই এলাকায় তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২০২১ সালের সর্বশেষ গেজেটে সাধারণ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গোলজার হোসেনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’

অশ্রুসিক্ত চোখে মো. আব্দুস সালাম মৃধা আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাইকে হারিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও তার নাম গেজেটভূক্ত করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে যাচাই-বাছাইতে তার নাম গেজেটভূক্ত হয়েছে। আমার ভাইয়ের এক বছরের মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ও সাথে আরও টাকা যোগ করে তার রুহের আত্মার শান্তির জন্য তিন হাজার মানুষকে একবেলা খাইয়েছি।

তিনি আরও বলেন, 'আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ায় নিজেকে ধন্য ও গর্বিত মনে করছি।’

শহীদ গোলজার হোসেনের সহযোদ্ধা এম, এম জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘গোলজার আহম্মেদ সম্মুখ যুদ্ধে পাকসেনার গুলিতে নিহত হন। এ সময় আমার আরও দু’জন সহযোদ্ধা নিহত হন। একাত্তর সালের সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজও আঁতকে উঠি। ৫০ বছর ধরে সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। তবে ৫০ বছর পর এসে সহযোদ্ধা গোলজার হোসেনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারলাম। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর'।

কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘শহীদ গোলজার হোসেন মৃধার ভাইয়েরা যা দেখিয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ ধরণের আয়োজন এর আগে কখনও দেখিনি। খুব ভালো লাগল।’

কাশিয়ানী থানার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এনায়েত হোসেন বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েও গোলজার ৫০ বছর ধরে স্বীকৃতি পাননি। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন এটা অনেক আনন্দের।’

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দনাথ রায় বলেন, সর্বশেষ প্রকাশিত গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেনের নাম এসেছে। দেরিতে হলেও তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

×