ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

প্রতিক্রিয়া

পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাই বড় চ্যালেঞ্জ

সংকট উত্তরণের আগে সংকটের কথা স্বীকার করতে হবে

পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাই বড় চ্যালেঞ্জ

মো. তৌহিদ হোসেন

মো. তৌহিদ হোসেন

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০১:০৩ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৯:৫৮

যুক্তরাষ্ট্র আংশিক নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মোকাবিলা করার শক্তি বাংলাদেশের নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝগড়াঝাঁটির জায়গা থেকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসাই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলারও সম্পর্ক রয়েছে।

সরকারের সামনে অর্থনীতি নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যত কিছুই বলা হোক না কেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। যাদের হাজার কোটি টাকা রয়েছে, তাদের জন্য হয়তো কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। তবে সীমিত আয়ের মানুষ হাড়ে হাড়ে সংকট টের পাচ্ছে। যাদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ, তারা টের পাচ্ছে অনেক বেশি। তাদের একটু বেশি হিসাব করে চলতে হচ্ছে।

এখানে অর্থনীতি ও কূটনীতির চ্যালেঞ্জ একটি অপরের সঙ্গে জড়িত। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ভীষণভাবে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে কৃষি। এ কৃষির জন্যও সার আমদানির প্রয়োজন পড়ে। সার আমদানি করতে না পারলে কৃষি খাতও হুমকির মধ্যে পড়বে। আর যে দেশগুলো বাংলাদেশকে সার রপ্তানি করে, তারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে থাকলেও তারা কি বলেছে, বিনামূল্যে সার রপ্তানি করবে? তাদের থেকে সার আনতে অর্থ লাগবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অর্থ আসবে কোথা থেকে। আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ ভয়াবহ আর্থিক সংকটে রয়েছে।

এ সংকট থেকে উত্তরণে আগে সংকটকে স্বীকার করতে হবে। স্বীকার করে তা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আর সমাধান করতে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড রপ্তানি ও রেমিট্যান্স– এ দুই খাতে জোর দিতে হবে। এ দুই খাতের একটিতেও কোনো ভালো খবর নেই। আর এখানেই চলে আসছে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ বর্তমানে ঝগড়া করে যাচ্ছে সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের সঙ্গে। আর এ দেশটি বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। যুক্তরাষ্ট্র কিছু ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশ বিপদে পড়ে যাবে– এটি আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু যদি আসলেই তারা বাণিজ্য বা অন্য কোনো ধরনের আংশিক নিষেধাজ্ঞাও দেয়, সেটি মোকাবিলা করার শক্তি বাংলাদেশের নেই; যতই বলি না কেন– সেটি মোকাবিলা করে দাঁড়াতে পারব। ফলে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাদের সন্তুষ্ট করতে হবে অথবা তারা যে রকম চায়, সেদিকে আস্তে আস্তে এগোতে হবে।

পশ্চিমারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বাজে নির্বাচনের পর কিছু করেনি। এখনও তারা কিছু না করলে তো ভালো। তাহলে সরকারের কোনো সমস্যা হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিলে তার বাকি মিত্রদের তা অনুসরণ করার চল রয়েছে।

নির্বাচনকে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার  (সিইসি) বলেছেন, ৪০ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে। সারাদিনের পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য মন্তব্য দেখে মনে হয়েছে, এ পরিসংখ্যান একটু বাড়িয়ে বলা হতেও পারে। কারণ সরকার সমর্থক কিছু গণমাধ্যমে এমনও প্রতিবেদন দেখেছি, ভোটের শেষ মুহূর্তে অনেক কেন্দ্রে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে।

শুধু ভোট নয়, যে কোনো ক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যানে সব সময় সন্দেহের জায়গা থেকে যায়। প্রথমে সিইসি ২৮ শতাংশ বললেও পাশ থেকে সচিব ৪০ শতাংশ বলার পর তিনি তা-ই বললেন। এটি একটি অদ্ভুত ব্যাপার। সিইসি গণমাধ্যমকে ব্রিফ করতে এসেছেন, আর তিনি জানেন না যে ভোট ৪০ শতাংশ পড়েছে। সরকারি হিসাবে বিশ্বাস যে কম করা যায়– এটি তার একটি উদাহরণ।

এ ছাড়া অনেকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ভোট দিতে মানুষকে খুব একটা দেখা যায়নি। অনেকের অনুমান খুব বেশি হলে ভোট ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে এ পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। তবে যেহেতু এর গ্রহণযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই, তাই নিশ্চিত করে এটি বলা যাবে না।

নির্বাচন মানে হলো বেছে নেওয়ার সুযোগ। এবারের ভোটে কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। এ ভোটে মানুষ আগ্রহী কেন হবে– এর কারণ খুঁজে পাই না। তাই ভোটার উপস্থিতি হয়তো কম হয়েছে। অনেককে ভিজিএফ কার্ডসহ কিছু সরকারি সুবিধা বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আসলে সুবিধা বাতিল করে দেবে কিনা– সেটি পরের বিষয়। তবে এ ধরনের হুমকি ছিল।
লেখক : সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত



#

আরও পড়ুন

×