ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সুখ কিংবা মধ্যবয়সের টানাপোড়েন

সুখ কিংবা মধ্যবয়সের টানাপোড়েন

.

মাহজাবিন আলমগীর

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪ | ০৫:১৭ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:৪২

গত ২১ মার্চ সমকালের খবরে জানতে পারি, বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় ১১ ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। আর দেশের জনসংখ্যার ভেতর সব থেকে অসুখী জনগোষ্ঠী ধরা হয়েছে মধ্যবয়সীদের (৩০-৫৯)। প্রতিটা বয়সেরই আলাদা আলাদা মাধুর্য, আলাদা আলাদা অবদান থাকে আমাদের জীবনে। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সংসার ও ক্যারিয়ারের দিক থেকে মধ্যবয়সী মানুষেরা অনেক প্রতিষ্ঠিত থাকে জীবনে, তবে তাদের কেন এত অসুখী ভাবতে হবে নিজেদের? 

বস্তুত মধ্যবয়সে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্তানরা বড় হয়ে ওঠে, তাদের একটি আলাদা জগৎ তৈরি হয়। বাবা-মার সঙ্গে সন্তানদের অনেক ক্ষেত্রেই মতের অমিল হয়। অধিকাংশ দম্পতি হয়ে ওঠে অনেকটা বিবর্ণ। যৌবনের সেই উচ্ছলতা, উদ্যামতার বাঁধভাঙা প্রকাশ অনেকটাই ঢাকা পড়ে যায়, সংসার জীবনের রূঢ় বাস্তবতায়। দাম্পত্য প্রেম হয়ে ওঠে গরিবের ঘরের বেনারসি শাড়ির মতোই বিলাসদ্রব্য। স্বামী-স্ত্রীর মানসিক দূরত্ব বাড়ে। তাছাড়া বয়সের ভারে বৃদ্ধ মা-বাবাও মধ্যবয়সী সন্তানদের ভেতর একটা নির্ভরতা খুঁজে বেড়ান। 
অন্যদিকে ভোগবাদী সমাজের অসুস্থ প্রতিযোগিতার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে বস্তুগত সুখের অনবরত সন্ধানের আশায় মানসিক শান্তিটাই হারিয়ে ফেলে মানুষ। একসময় মনের শান্তির জন্য মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য কামনা করত, আজ টাকা দিয়ে সুখ কিনতে ঘুরে বেড়ায় শপিংমলে, দামি রিসোর্টে। নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক পরে দেশিবিদেশি রিসোর্ট ঘুরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে আমরা নিজেদের স্ট্যাটাস বাড়াই। আহা, আমরা যেন কত সুখী! সমাজে তখন টাকাটাই হয়ে ওঠে সব সম্পর্কের সমীকরণ। সেখানে মানুষ পরস্পর নৈকট্যের তাগিদ অনুভব করে না, পরস্পরকে ব্যবহার করে কেবল স্বার্থসিদ্ধির সিঁড়ি হিসেবে। এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতায় কেবল মানসিক চাপই বাড়ে। আর কিছু নয়, এসব মানসিক চাপের। 

পাশাপাশি মধ্যবয়সে প্রাকৃতিক নিয়মেই শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা কোলস্টেরলের মতো বিভিন্ন অসক্রামক ব্যাধি। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক করে মৃত্যুর ঘটনা মধ্যবয়সী পুরুষদের ভেতর সব থেকে বেশি। যারা মাঝবয়সে এসেও জীবনে অর্থনৈতিকভাবে তেমন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি, তারা সামনের প্রবীণ বয়সের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত থাকেন, নারী হলে তো কথাই নেই। 

মধ্যবয়সে দাম্পত্য মানসিক দূরত্ব যেন না বাড়ে সেজন্য স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে সময় দেওয়া দরকার। উঠতি বয়সী সন্তানদের সঙ্গে যেন তিক্ততা না বাড়ে, সেজন্য সন্তানদের ভালো বন্ধু হয়ে ওঠা দরকার। 
সব থেকে বড় কথা, সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজে যেন ফুরিয়ে না যাই, সেটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এজন্য পরিবারের পাশাপাশি নিজস্ব একটা সামাজিক জীবন গড়ে তোলা দরকার, যেখানে এমন দু’একজন বন্ধু থাকবে যারা ভালো কাজে উৎসাহ দেবে, যাদের ভেতর মানসিক আশ্রয় খুঁজে পাওয়া যাবে। তখন দেখা যাবে সুখ নামক পাখিটা কিছুটা হলেও ধরা দিচ্ছে জীবনে। 

মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

আরও পড়ুন

×