টিকিটিং ব্যবস্থার আসল দায়ভার কার?

.
রবিউল ইসলাম
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪ | ০৫:১৫ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:৪৩
সমকালের সম্পাদকীয় বিভাগে ২৮ মার্চ রেলের কালোবাজারি বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশ হয়। এ নিয়ে কিছু কথা বলা জরুরি। তার আগে বলে নেওয়া ভালো, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রেলের টিকিটের ক্ষেত্র বেশ পরিবর্তিত হয়েছে। স্বচ্ছতার জন্য আজকাল ফোন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমেই বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। এমনকি মার্চ ২০২৩ থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে জাতীয় পরিচয়পত্রও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে আসলে এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। প্রথমে কাউন্টার থেকে বেআইনিভাবে টিকিট বিক্রি বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমার অনুসন্ধান অনুযায়ী, টিকিট কালোবাজারি দুইভাবে হয়ে থাকে। ১. রেলওয়ে বুকিং এজেন্টদের মাধ্যমে, যারা যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য তথ্য অবৈধভাবে ব্যবহার করে সিস্টেম থেকে টিকিট কিনে থাকে। ২. ‘বৈধ’ টিকিট ক্রেতাদের মাধ্যমে– যারা বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টিকিট কেনেন। পরে বেশি দামে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেন। এখন করিম কোনো ঝামেলা ছাড়াই ওই টিকিটটি নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবে, কারণ রহিম বা করিমের মধ্যে কে ভ্রমণ করছে সে বিষয়টি যাচাই করা হয় না। আসল ভ্রমণকারী কে তা যাচাই করা ছাড়া ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে টিকিট কালোবাজারির কোনো অস্তিত্ব নেই, কারণ সেখানে যাত্রী ট্রেনে ওঠার আগে তাদের পরিচয়পত্র ঠিকভাবে যাচাই করে নেওয়া হয়। যদিও আমরা শুনে থাকি বাংলাদেশ রেলে যাত্রীর টিকিট তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যাচাই করা হয়; কিন্তু প্রচুর ট্রেন ভ্রমণ করা সত্ত্বেও, ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনোদিন এই প্রমাণ পাইনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, যথেষ্ট লোকবলের অভাবে এ যাচাই প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কার্যকর করা যায় না। কিন্তু ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি রোধ করতে হলে, এ সমস্যার অবশ্যই সমাধান করতে হবে।
অন্যদিকে ওটিপি ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে বুকিং এজেন্টদের যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে অগ্রিম রেলের টিকিট বুকিং করা বন্ধ করা যায়। এই ওটিপি ব্যবস্থায় একটি কোড যাত্রীর নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে পাঠানো হয় এবং এরপর ওই ওটিপি কোডটি যাত্রীকে সিস্টেমে প্রদান করে টিকিট কিনতে হয়। যেহেতু একজন যাত্রীর সাধারণত সীমিত সংখ্যক ফোন নম্বরই থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে এই ওটিপি পদ্ধতির মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি কমানো সম্ভব।
সহজ.কম রেল টিকেটিং ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে ট্রেন টিকেট আরও সহজলভ্য হয়েছে। যারা টিকেট পান তাঁদের চাইতে যারা টিকেট পান না তাঁদের (যারা সংখ্যায়ও বেশি) অভিযোগই স্বাভাবিকভাবে বেশি শোনা যায়। তারপরও বিগত বছরে যে সকল যাত্রীরা ঈদে ট্রেন ভ্রমণ করেছেন তাঁদের তথ্য বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকাশ করেছে। টিকিটিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করে কখনোই রেলের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা যাবে না। তাই আমাদের উচিত সমস্যার মূলে গিয়ে এর সমাধান খোঁজা।
রবিউল ইসলাম: প্রাবন্ধিক
- বিষয় :
- রেল