ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

হাজারো পরিবারের মুখে হাসি

হাজারো পরিবারের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২২ | ০৩:১৯

স্বল্প আয়ের কারণে অনেক দিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগছিল সৈয়দ নূরের পরিবার। সামান্য জমির মালিক উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গ্রামের এই পরিবারটি তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিল। তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা দূরে থাক, পরিবারটি তিন বেলা খাবার জোগাড় করতেই পারছিল না।

তবে কক্সবাজার জেলার মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতির লক্ষ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের কারণে পরিবারটির অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নূরের পরিবার কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ৫ হাজার ২২৯টি পরিবারের মধ্যে একটি যারা ওয়ার্ল্ডভিশন-বাস্তবায়িত ইমার্জেন্সি ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রামের (ইএফএসপি) সহায়তায় তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

নূর ইএফএসপি'র 'ক্যাশ ফর ওয়ার্ক' কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত যেখানে তিনি দিনে ছয় ঘণ্টা কাজ করে মোটামুটি অর্থ উপার্জন করেন। ক্যাশ ফর ওয়ার্ক কার্যক্রমে স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করে রাস্তা, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, খাল ও নর্দমা সংস্কার ও উন্নত করা হচ্ছে। নূর বলেন, 'পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত কাজ ছিল না আমার। কিন্তু আমি ক্যাশ ফর ওয়ার্ক কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার পর আমার আর্থিক অনটনের দিন শেষ হয়েছে।"

এই কার্যক্রমে ৫ হাজার ২২৯টি দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা ১৪ মাস কাজ করেন এবং প্রতি মাসে গড়ে ৫ হাজার ৬শ টাকা (৬৬ মার্কিন ডলার) উপার্জন করেন, যা পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করেছে। ওয়ার্ল্ডভিশনের তথ্য বলছে, ক্যাশ ফর ওয়ার্কের ১২০টি প্রকল্পের আওতায় দুটি উপজেলায় ৩৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা, ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার নর্দমা এবং ১ দশমিক ০৭ কিলোমিটার খাল সংস্কার ও উন্নত করা হয়েছে এবং ১১ হাজার ৯৭৯ বর্গমিটার খেলার মাঠ ভরাটের কাজ করা হয়েছে।


ওয়ার্ল্ডভিশনের বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্সের (বিআরসিআর) অধীনে পরিচালিত কার্যক্রম ইএফএসপির চিফ অব পার্টি মো. রজব আলী বলেন, এ কর্মসূচির মাধ্যমে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার দরিদ্র পরিবারগুলোর স্বল্পমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা সংকট সমাধানের এবং মধ্যমেয়াদি জীবিকা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। 'ক্যাশ ফর ওয়ার্ক' ছাড়া ইএফএসপির অন্যান্য কার্যক্রম হলো 'আয়বর্ধক কার্যক্রম (আইজিএ)', 'জীবিকা', 'নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষের সম্পৃক্ততা' বা মেইল এনগেজমেন্ট ও 'পুষ্টি'। ইএফএসপির পুরো কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য শিশুদের কল্যাণ।

আয়বর্ধন কার্যক্রম (আইজিএ) দরিদ্র পরিবারগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে ছোট আকারের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে এবং বাজারে তাদের প্রবেশে সাহায্য করছে, যার মাধ্যমে পারিবারগুলোর আয় বেড়েছে, খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্য এসেছে এবং তাদের সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ইএফএসপি ৪ হাজার ৭০৬টি পরিবারকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনাসহ সরকারের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তায় কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়াও, প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী স্টার্টআপ ব্যবসায় সহায়তা হিসেবে ১৫ হাজার টাকা পেয়েছে (১৭৭ ডলার) এবং এভাবে তাদের সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করেছে।

'জীবন ও জীবিকা' কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫ হাজার ২২৯টি পরিবারকে সবজি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বীজ বপন, বীজতলা তৈরি, কৃত্রিম পরাগায়ন, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ এবং জৈব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষি সরঞ্জাম ও ছয় দফায় তাদের বীজও দেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো এখন জলবায়ু-সহনশীল পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছে।


ইএফএসপির আওতাধীন 'নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষের সংশ্নিষ্টতা' বা 'মেইল এনগেজমেন্ট' কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো, সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং পারিবারিক কাজে পুরুষদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে পরিবারে শান্তি আনা। প্রায় ২ হাজার ৬শ বৈঠকের মাধ্যমে এ কার্যক্রমে ২ হাজার দম্পতি সম্পৃক্ত হওয়ার পর এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমেছে।

'পুষ্টি' কার্যক্রম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং সেগুলো তৈরির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার উন্নতিতে অবদান রেখে চলেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ১৫০ জন লিড মাদারকে কমিউনিটি এডুকেটর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যারা নিজেদের এলাকার ১ হাজার ৮৬৬ জন মায়ের কাছে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন বৈঠক এবং রান্না প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি বিষয়ে বার্তা দিচ্ছেন এবং অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে যুক্ত করছেন।

ইএফএসপি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ইউএসএআইডি'র প্রশংসা করেছে ওয়ার্ল্ডভিশন কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ল্ডভিশনের রেসপন্স ডিরেক্টর ফ্রেডরিক ক্রিস্টোফার বলেন, "আমরা আনন্দিত যে, ইউএসএআইডি'র আর্থিক সহায়তায় ইএফএসপি প্রোগ্রাম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।"

আরও পড়ুন

×