ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিশৃঙ্খলা ও বেপরোয়া গতি সড়কে বাড়ছে প্রাণহানি

বিশৃঙ্খলা ও বেপরোয়া গতি সড়কে বাড়ছে প্রাণহানি

রাজীব আহাম্মদ

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ | ০০:৩৩

ঈদের আগে যানজট ভোগালেও সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে তুলনামূলক কম। ছুটির পর ফিরতি যাত্রায় যানজট কম থাকায় যানবাহনের বাড়তি গতি ও সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে প্রাণহানি বেড়েছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনা বিশ্নেষণে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইক এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার মতো ছোট যানবাহনের সঙ্গে বড় গাড়ির সংঘর্ষে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানির কারণ পথচারীকে গাড়ির চাপা।

ঈদের সময় পরিবহন সংকটে ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামে। এ কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ে। ভিড়ের চাপে সড়কে কাগজবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধেও কড়াকড়ি থাকে না। পরিবহন নেতাদের গাড়ির কাগজ হালনাগাদ না থাকলেও সড়কে চলে। পরিবহন সংশ্নিষ্টরা জানান, ঈদের আগে-পরের ব্যস্ত দিনগুলোতে বেশি ট্রিপ দিতে গাড়ি বেপরোয়া চলে। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।

গত শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট মায়ের পেট চিড়ে সড়কে সন্তানের জন্ম হয়। অলৌকিকভাবে শিশুটি বেঁচে গেলেও তাঁর মা-বাবা ও ছয় বছর বয়সী বোনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় সংশ্নিষ্ট ট্রাকটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ গত ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও সড়কে বিনাবাধায় চলছিল।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী সমকালকে বলেন, ঈদের আগে-পরের দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কারণ বিশ্নেষণ করা হবে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যেসব যানবাহনকে পাওয়া যাবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঈদুল ফিতরে ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ১৫ দিনের ঈদযাত্রায় ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত এবং ৮৪৪ জন আহত হয়েছিলেন। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদের দুর্ঘটনার প্রতিবেদন ২০ জুলাই প্রকাশিত হবে। তাঁদের ধারণা, দুর্ঘটনা কমেনি।

সেভ দ্য রোড নামের একটি সংগঠন রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, ঈদের আগে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ১২ দিনে ১ হাজার ৯৫৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৬১২ জন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, গাড়ির গতি বাড়ায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। আরেকটি কারণ হলো, চালকরা ১০-১২ দিন ধরে টানা গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে তাঁরা ক্লান্ত থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

রাস্তা ঠিকই আছে দাবি করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, একই সড়কের একই লেনে সব ধরনের গতির যানবাহন চললে দুর্ঘটনা হবে। দুর্ঘটনা রোধে ভিন্ন গতির গাড়ির লেন পৃথক করতে হবে। তাই মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের সুপারিশ করা হয়। দুর্ঘটনা রোধে সড়কে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) স্থাপনসহ বিভিন্ন আধুনিক ব্যবস্থা চালু করতে সওজ দুটি প্রকল্প নিয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৩ হাজার ৩০৯ জন নিহত হয়েছেন সড়কে। তাঁদের ৩৯ শতাংশই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে পথচারীর। এরপর বেশি মৃত্যু ঘটেছে ছোট যানবাহনের সঙ্গে বাস-ট্রাকের মতো বড়
গাড়ির সংঘর্ষে।

পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে সড়কে ৫ হাজার ৪৭২ দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের পরিসংখ্যানে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ২৮৯। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর ৬ হাজার ২৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

×