সাবরিনা, আরিফুলসহ আসামিরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছেন: বিচারক

সমকাল ও আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২২ | ০৯:৪১ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১০:১০
ডা. সাবরিনা, আরিফুলসহ আসামিরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন রায়ের আগে এ মন্তব্য করেন।
রায়ের আগে হাকিম বলেন, রাষ্ট্র যখন নাগরিকের করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার দায়িত্ব নিয়েছে, তখন ভাইরাসটির ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে ডা. সাবরিনা চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরীসহ অপর আসামিরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছেন। তাই তাদের প্রাপ্য সাজা দেওয়া প্রয়োজন।
এদিন পৃথক তিন ধারায় সব আসামির উপস্থিতিতে করোনার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী, তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের প্রত্যেককে ১১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১১ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আরিফুল হক চৌধুরী জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। দণ্ডিত অপর ছয়জন হলেন— জেকেজির কো-অর্ডিনেটর আবু সাঈদ চৌধুরী, আরিফুলের বোন জেবুন্নেছা রিমা, সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু, তার স্ত্রী তানজিলা পাটোয়ারী, জেকেজির কর্মচারী বিপুল দাস ও শফিকুল ইসলাম রোমিও।
রায়ে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে একই ধরনের অপরাধ ঘটিয়েছেন, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে কভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ জালিয়াতি ও জাল সনদকে আসল হিসেবে দেখানোর দায়ে সব আসামিকে পৃথক দুটি ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬৬ ও ৪৭১ ধারা) চার বছর করে কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রতারণার দায়ে ৪২০ ধারায় তিন বছরের সাজা ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। তিনটি ধারায় প্রত্যেকটি সাজা একের পর এক চলবে। ফলে তাদের ১১ বছর করে জেলে খাটতে হবে। অন্যদিকে দণ্ডবিধির ১৭০/২৬৯/৪০৬/৪৬৫ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়।
২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পায় জেকেজি হেলথ কেয়ার। কিন্তু অভিযোগ আসে— সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করেই রোগীদের ভুয়া সনদও দিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর কল্যাণপুরের কামাল হোসেনের অভিযোগের পর ওই বছরের ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিমু ও তার স্ত্রী তানজীলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের কম্পিউটার থেকে চারজন প্রবাসীসহ ৪৩ জনের নামে তৈরি করা করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ পাওয়া যায়। পরদিন কামাল হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।
মামলায় সরকারি নাম ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ, কাজে অবহেলার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি ও করোনার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী, তার বোন জেবুন্নেছাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ১২ জুলাই ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অভিযোগে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ছিলেন। সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় জালিয়াতি ও প্রতারণার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠার পর তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুই মাস তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ১৩ আগস্ট চার্জশিট দেয়।
অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফকে জালিয়াতির ‘হোতা’ বলে উল্লেখ করা হয়। আর বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে ওই জালিয়াতিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট আরিফুল, সাবরিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
- বিষয় :
- জেকেজি
- ডা. সাবরিনা
- আরিফুল
- বিচারক
- করোনাভাইরাস