ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে নিতে চায় ঢাকা-টোকিও

সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে নিতে চায় ঢাকা-টোকিও

তাসনিম মহসিন

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ০০:০১

জাপান বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বেশ গভীরে। এ সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে চায় ঢাকা ও টোকিও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরে দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্ব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। তাই এ সফরকে কেন্দ্র করে আজ রাজধানীতে বৈঠকে বসছেন বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের প্রতিনিধিরা।

আগামী ২৯ নভেম্বর তিন দিনের সফরে জাপান যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সরকারপ্রধানের এ সফর উপলক্ষে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের সম্পর্ক বাড়াতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সম্ভাব্য সুযোগগুলো খতিয়ে দেখছে। এ সফর উপলক্ষে সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবার ঢাকা এসেছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আরিমা ইউতাকার নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।

আজ অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। 

এদিকে, চীন ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ। আর এ সুযোগ নিতে চায় জাপানও। তারা বাংলাদেশের কাছে উন্নতমানের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে আগ্রহী। আর এ কারণে দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে চায় দুই দেশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সামরিক খাতে সম্পর্ক বাড়াতে হলে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে হয়। জাপান সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে হলে সম্পর্ককে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

এ বিষয়ে জাপান দূতাবাসের এক কূটনীতিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে জাপানের প্রতিষ্ঠান। এখন বিষয়টি বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করছে তারা কী করবে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে দিল্লিতে জাপান দূতাবাসের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা সমন্বয় করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) করতে চেয়েছিল ঢাকা। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের সময় মেলাতে না পারায় বৈঠকটি করা হয়ে উঠছে না। এ কারণে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করতে জাপানের পক্ষ থেকে সংশ্নিষ্ট মহাপরিচালক বৈঠকটি করছেন। বৈঠক শেষে আগামীকাল শুক্রবারই দেশে ফিরবে প্রতিনিধি দলটি।

সামরিক খাতে সম্পর্ক বাড়াতে টোকিওর আগ্রহের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জাপান প্রযুক্তিগত সমরাস্ত্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। তারা বাংলাদেশের কাছে এর আগে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছে। তাদের সরঞ্জামগুলো মূলত নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য বেশি প্রযোজ্য।

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও যৌথ বিবৃতিতে তার প্রতিফলন থাকবে। যেমন, তাদের মিতসুবিশি প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের রাডার তৈরি করে। টোকিও তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে ঢাকা সেই পণ্যগুলো অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দাম ও মানের বিষয়টি তুলনা করে দেখবে। তার পর তা কেনার বিষয়টি আসবে।

তবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে এত দাম দিয়ে পণ্য বাংলাদেশ কিনতে পারবে কিনা, সেটিও একটি বিবেচনার বিষয় রয়েছে। বর্তমানে আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সমরাস্ত্র সংগ্রহ করার চেয়ে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহে অগ্রাধিকার রয়েছে বাংলাদেশের।

স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহজ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব দেশের চেয়ে এগিয়ে জাপান। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে ১৮ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে প্রকল্প সহায়তার বিষয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। আগামী ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে দ্বিতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই মূলত সফরের সার্বিক একটি ধারণা পাওয়া যাবে কী কী চুক্তি ও সমঝোতা সই করবে দুই দেশ।

আরও পড়ুন

×