হাইওয়ে পুলিশকে ঢেলে সাজানো হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

হাইওয়ে পুলিশের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান/ ছবি- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩ | ১৬:১৯ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ | ১৬:১৯
মহাসড়ক নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশকে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘এ জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই করা হবে। আগে প্রতিনিয়তই সড়কে-মহাসড়কে চুরি-ডাকাতি লুটপাটের খবর পেতাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হাইওয়ে পুলিশকে সমৃদ্ধ করার পরে আগের মতো মহাসড়কে চুরি-ডাকাতির খবর পাওয়া যায় না।’
রোববার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ‘সড়ক সারথি’ স্মরণিকা এবং ‘তদন্ত ম্যানুয়েল’র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া, ‘হ্যালো এইচপি’ মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যেকেউ যেকোনো স্থান থেকে তথ্য শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া ‘জরুরি সাহায্য বাটন’ ক্লিক করে হাইওয়ে পুলিশের প্যাট্রোল টিমের কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে মহাসড়কে ‘জিরো এক্সিডেন্ট ভিশন’কে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জনবল, অবকাঠামো উন্নয়ন, অত্যাধুনিক যানবাহন সংযোজন, রেডিও কমিউনিকেশন ব্যবস্থা, ভেহিকেল মনিটরিং সিস্টেমের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
দেশে বছরে ক্যান্সারসহ অন্য যেকোনো রোগের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক নিরাপদ করতে সবার দায়িত্ব রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত এক দশকে দৃশ্যমান অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক, মেরিন ড্রাইভসহ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ সড়কপথে যাতায়াত করেন। এছাড়া ৮৩ ভাগ পণ্য সড়কপথে পরিবহন করা হয়। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সড়কেও বেড়েছে ব্যস্ততা। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি হবে। যাতে দুর্ঘটনাসহ চুরি-ডাকাতির ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।’
হাইওয়ে পুলিশের লোকবল বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশে জনবল বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়মিত প্রোগ্রামে রয়েছে। মহাসড়ক সচল ও নিরাপদ রাখতে যা যা করা দরকার করা হবে।’
গত ঈদে মহাসড়কে উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো যানজট বা সমস্যা হয়নি। হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতায় মানুষ নিরাপদে বাড়ি যেতে পেরেছে।’
হাইওয়ে পুলিশের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের প্রধান একজন অতিরিক্ত আইজিপি। পাঁচজন ডিআইজি ও আটজন অতিরিক্ত ডিআইজিসহ এসপি থেকে শুরু করে কনেস্টবল পর্যন্ত দুই হাজার ৯২৭ জন কর্মকর্তা এবং ফোর্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই ইউনিট। বর্তমানে সারা দেশে আট হাজার ৮৮৮ কিলোমিটার সড়কপথ রয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯৯০ কিলোমিটার ও আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে চার হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার। এসবের মধ্যে দুই হাজার ৯৯১ কিলোমিটার মহাসড়ক হাইওয়ে পুলিশের আওতাধীন।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, গত ২০২২ সালের তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মহাসড়কে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে এক লাখ ৪১ হাজার ৪৮১টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ৬৬ হাজার ৫৬০টি থ্রি-হুইলার জব্দ করা হয়েছে। শতাধিক মাদকবিরোধী অভিযানে ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক কোটি ৯৭ লাখ ৭৮ হাজার ২০০ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মামলা হয়েছে ৭৪ হাজার ৪২২টি। এ সময়ে ২৬ হাজার ৯২১টি থ্রি-হুইলার ও দুই হাজার ৩৮০টি ফিটনেসহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এক হাজার ২২২টি গাড়ির বিরুদ্ধে ওভারলোডেড করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত কয়েকটি অভিযানে ৪৯ জনকে মাদককারবারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৫ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘প্রস্তাবিত সড়ক আইনে ট্রাফিক রুল ভঙ্গ করলে গাড়ি চালকের ১০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ শুধু গাড়ির চালক করে না, পথচারীও করে। এজন্য চালককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করলে পথচারীকেও করতে হবে। আইনে এমন কিছু অসঙ্গতি ছিল, যা পরে সংশোধন করা হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘মহাসড়ককে নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। সড়কে প্রতিবছর মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এতে বুঝা যায় পুলিশ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ।
/এইচকে/
- বিষয় :
- হাইওয়ে পুলিশ
- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী