‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ’
৩০ শিক্ষার্থী পেল পুরস্কার-সম্মাননা

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩ | ১৬:৪৮ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ | ০৪:৪৩
প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকেরের স্মরণে ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ’ কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। আলী যাকের স্মরণে গত নভেম্বরে দেশব্যাপী এ কর্মসূচি হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এর আওতায় গতকাল শুক্রবার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিনটি বই পাঠ ও প্রতিক্রিয়া লেখার ওপর ৩০ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে প্রতি বিভাগে সেরা ১০ জনের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকার বই ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক পাঠককে সনদ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডা. সারওয়ার আলী, মফিদুল হক ও সারা যাকের এবং জুরি বোর্ডের সদস্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর, আলী যাকেরের কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া ও গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ-এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক তরুণসমাজ তৈরির প্রয়াস ছিল আলী যাকেরের। তাই এমন আয়োজন শুধু তাকে স্মরণ করা নয়, জ্ঞানচর্চায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করার পদক্ষেপ। আলী যাকের নিজের জীবন উদ্যাপন করেছিলেন উল্লেখ করে সারওয়ার আলী উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান পাঠ আনন্দের মধ্য দিয়ে জীবন উদ্যাপনের।
বাঙালি নানাভাবে নিজের বিকাশের পথ খুঁজে নেয় উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, অনেক মানুষ অনেকভাবে যুক্ত হয়েছেন এ উদ্যোগে। এই শক্তি কী করতে পারে, তার প্রমাণ আজকের এ আয়োজন। সামনে শতাধিক পাঠাগারকে এ আয়োজনে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। মফিদুল হক বলেন, এখনকার অনেক শিক্ষার্থী পাঠবিমুখ নয়, পাঠ উদ্যোগী হচ্ছে।
সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশে দর্শনমূল্য দিয়ে নাটক দেখার ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে আলী যাকেরের হাত ধরে। দেশের হৃদয় তৈরির এক কারিগর আলী যাকের তিনটি বিষয়ের সঙ্গে কোনো দিন আপস করেননি। মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
বই মানুষের চিন্তাকে কেমন করে জাগ্রত করে, সে আলোচনা উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকেরের কথায়। তিনি জানান, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নির্বাচনে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তির বিকাশের দিকে। শ্রেয়া সর্বজায়া তার বাবা আলী যাকেরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, বই মানুষকে নতুন জীবন দেয়। ফেসবুক, টিকটকের এ সময়েও এত শিক্ষার্থী যখন বই নিয়ে আগ্রহ দেখায়, তখন আশা জাগায়।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর বলেন, বিভিন্ন পাঠাগারের চেয়ার দখল করে রাখেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে সৃজনশীল বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবে, সে প্রমাণ আজকের অনুষ্ঠানে হলভর্তি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
দেশের ৫০টি পাঠাগারের মাধ্যমে কয়েক শ শিক্ষার্থীকে বই পড়ানো এবং প্রতিক্রিয়া লেখার কাজের সমন্বয় করেছেন দনিয়া পাঠাগারের মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। তিনি উল্লেখ করেন, করোনাকালে ১০টি পাঠাগারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই পড়ানোর প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এগিয়ে আসার কথা।
ঢাকা মহানগরীর দনিয়া পাঠাগারের মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজকে প্রধান করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে 'আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ’ পরিচালিত হয়। এ উদ্যোগে সহায়তা করেছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন। তিন মাসব্যাপী এ বইপাঠ কর্মসূচির সূচনা হয় গত নভেম্বরে। প্রতিটি গ্রন্থাগারে নির্বাচিত তিনটি বইয়ের পাঁচটি করে সেট দেওয়া হয়। নির্বাচিত গ্রন্থসমূহ হলো– স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মুহাম্মদ জাফর ইকবাল রচিত 'আমার বন্ধু রাশেদ', কলেজ পর্যায়ে আলী যাকের-এর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'সেই অরুণোদয় থেকে' এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক রচিত 'একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’।
ঢাকা মহানগর ও কয়েকটি জেলার ৪২টি পাঠাগার কর্মসূচিতে অংশ নেয়। পাঠ শেষে ৩৭টি পাঠাগার পাঠ-প্রতিক্রিয়া জমা দেয়। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ১১৫টি, কলেজ পর্যায়ে ৬২টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৭১টিসহ মোট ২৪৮টি পাঠ প্রতিক্রিয়া জমা পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মফিদুল হক, ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব সারা যাকের, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং আলী যাকেরের পুত্র ইরেশ যাকেরকে সদস্য করে জুরি বোর্ড গঠিত হয়।
প্রাপ্তপাঠ প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রাথমিক নির্বাচক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন সমকালের সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, জনকণ্ঠের সাংবাদিক মোরসালিন মিজান, ভোরের কাগজের সাংবাদিক ঝর্ণামনি এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের শিক্ষক মোহাম্মদ মোহসীন। তারা স্কুল পর্যায়ে ২৩টি, কলেজ পর্যায়ে ২০টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২৩টি পাঠ প্রতিক্রিয়া জুরি বোর্ডের চূড়ান্ত বিচারের জন্য মনোনিত করেন।