ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কয়েকজন মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কি সিন্ডিকেট নয়, প্রশ্ন ক্যাব সভাপতির

কয়েকজন মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কি সিন্ডিকেট নয়, প্রশ্ন  ক্যাব সভাপতির

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩ | ১১:১০ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩ | ১১:১৫

দ্রব্যমূল্যের আগুনে দাহ হওয়া ভোক্তাদের শুধু বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, সরকার বলছে সিন্ডিকেট নেই। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা কি সিন্ডিকেট নয়?

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ‘কেবল বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব নয়’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

ক্যাবের সভাপতি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ কীভাবে যে জীবন ধারণ করছে, সেটা কল্পনা করা যাচ্ছে না। মানুষের সঞ্চয় তলানিতে পড়েছে বা শেষ হয়ে গেছে, ধার-কর্জ করছে। মানুষ কষ্টে আছে। সরকারের এই দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। 

গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন কম লাভে সন্তুষ্টি পাচ্ছে না। তাদের অতিমুনাফা, অতিলোভ বাজার দরের বৃদ্ধির কারণ। ক্যাবিনেটে ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। সংসদ ও সরকারের মধ্যে রাজনীতিবিদদের তুলনায় ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য থাকলেও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মনিটরিংয়ে তার প্রতিফলন নেই। দাতাদের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করলেও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে গেছে। তাদের কঠোর হাতে রুখতে হবে। 

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে সরকার ৯৯ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া মানে সেন্ট্রাল ব্যাংকের টাকশাল থেকে টাকা ছাপাইয়া সরকারকে লোন দেওয়া। বাজারে যদি মানি সাপ্লাই বাড়ে তাহলে পণ্য মূল্য বাড়ে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় বাড়লে ও কর্মসংস্থান তৈরি হলে ভোক্তাদের কষ্ট কম হয়। 

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জয়ী হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, মনিটরিং করে তাৎক্ষণিকভাবে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধি কারণে আমদানি পণ্যের দাম যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে পণ্য এবং দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আমদানি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে দেশে উৎপাদিত পণ্যের হুটহাট মূল্যবৃদ্ধি, সিন্ডিকেট ও বিপণন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ছাড়া আর কিছুই নয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সিন্ডিকেট এক আতঙ্কের নাম। মাঝে মাঝে মনে হয় এই সিন্ডিকেটের কাছে শুধু ক্রেতা সাধারণ নয়, সরকারও জিম্মি হয়ে পড়ছে। কয়েকটি কর্পোরেট কোম্পানির বিরুদ্ধে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগের প্রতিবেদন পাওয়ার পরও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এতে মনে হতে পারে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করার পেছনেও সরকারের রাজনৈতিক দুর্বলতা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকারকে দেখতে পাই কাঁচামরিচ, ডিম, ডাব বিক্রেতাদের নিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে হুঁশিয়ারি দিতে। কিন্তু যেসব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, যাদের কারসাজিতে পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীরা সঠিক মূল্যে পণ্য পায় না সেই সব কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারকে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। তা নাহলে মনে হতে পারে বড় বড় কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা কোনোভাবে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয়। তারা বড় বড় পুঁজি নিয়ে বাজারে আসে। লাভ যেমন থাকে ঝুঁকিও তেমনি থাকে। তাই ভ্যাট-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনাকে সহনীয় রেখে সরকারকে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিতে হবে। একই সঙ্গে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে নতুন বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা প্রদান করে বাজার সিন্ডিকেট বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

হাসান আহমেদ বলেন, উৎপাদন বাড়াতে পারলে বাজার সিন্ডিকেট করা সম্ভব হবে না। বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি যাদের ওপর বাজারের দ্রব্যমূল্য অনেকখানি নির্ভর করে তারা প্রত্যেকেই সমাজের মর্যাদাবান ও বিত্তশালী। তাই এসব কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে অনুরোধ আপনারা সাধারণ মানুষের কল্যাণে বাজার ব্যবস্থাপনাকে স্থিতিশীল রাখবেন। যেন এ দেশের মানুষ সবসময় আপনাদের অবদানের কথা স্মরণ রাখে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বাজার মনিটরিং নিয়ে আয়োজিত এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা জয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক আবুল কাশেম, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক শাহ আলম খান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।


আরও পড়ুন

×