আন্তর্জাতিক কন্যা দিবসে সেভ দ্য চিলড্রেনের পর্যালোচনা
পেশাজীবী হতে চায় বেশিরভাগ মেয়ে, চায় পরিবারের সহযোগিতা

প্রতীকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪:২০ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪:২০
মেয়েদের আকাঙ্ক্ষা যেখানে আয় সৃষ্টিকারী পেশায় পদার্পণ, অন্যদিকে অনেক অভিভাবকেরই চাওয়া শুধু ‘ভালো মেয়ে’ হবে তার সন্তান। সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ-এর একটি ক্যাম্পেইনের পর্যালোচনা থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা দিবস ২০২৩-কে সামনে রেখে এক মাসব্যাপী সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ দেশের ৬৪টি জেলায় সরাসরি ও অনলাইনের মাধ্যমে ‘Girl Talk_বলবো আমি শুনো সবাই’ নামে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। যেখানে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীরা কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, পরিবারের থেকে তাদের আশা জানায়। কিশোরীদের পাশাপাশি এই ক্যাম্পেইনে তাদের পরিবার, অভিভাবক এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অংশ নেয় এবং সারাদেশ থেকে ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ সাড়া দেয়। মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি ছিল ১৩-১৯ বছর বয়সী মেয়ে।
মেয়েদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ ‘ভবিষ্যতে কি হতে চাও?’ প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন পেশাদার কাজের কথা বলেছে এবং অভিভাবক, পরিবার ও সমাজের মানুষের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ ‘মেয়ে ভবিষ্যতে কি হবে বলে আপনি আশা করেন?’ প্রশ্নের উত্তরে বলেছে মেয়ে ভালো মানুষ হয়ে ভবিষ্যতে ভালোভাবে জীবনধারণ করুক।
মেয়েদের মধ্যে ৩৭ শতাংশের মতামত তারা ডাক্তার হতে চায়, প্রায় ১৭ শতাংশ চায় শিক্ষক হতে এবং ১১ শতাংশ চায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যোগ দিতে। পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে পার্বত্য অঞ্চলের মেয়েদের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যোগদান করার ইচ্ছার হার বেশি। মোট ৭৪ শতাংশ মেয়ে ডাক্তার, শিক্ষক, পুলিশ, ইঞ্জিনিয়ার অথবা পাইলট হতে চায় অন্যদিকে খুব কম সংখ্যক মেয়ে পেশা হিসেবে আইন, ব্যাংকিং, সাংবাদিকতা, শিল্প-সাহিত্য বেছে নিতে চায় অথবা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে ডাক্তারি কে পেশা হিসেবে নেয়ার পক্ষে ২০ শতাংশ অভিভাবক, পরিবার ও সমাজের মানুষ যা সর্বোচ্চ এবং এরপরই তারা মেয়েদের জন্য পেশা হিসেবে বলেছেন শিক্ষকতা। অর্থাৎ, পেশা গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েদের চিন্তা তাদের অভিভাবক, পরিবার এবং সমাজের মানুষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, পারিপার্শ্বিক মতামত মেয়েদেরকে পেশা পছন্দ ও নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন অ্যাডভাইজার শামীমা আক্তার শাম্মী বলেন বলেন, ‘মেয়েদের পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পছন্দ তালিকার প্রথমে যে পেশাগুলো আছে সেগুলোর বাইরেও যে অনেক পেশায় মেয়েদের অনেক সুযোগ রয়েছে তা তাদের জানানো প্রয়োজন। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকে অনেক পেশার সাথেই মেয়েরা পরিচিত হচ্ছে না যা তাদের কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। আমরা পর্যালোচনায় দেখলাম যে যত সংখ্যক মেয়ে পাইলট হতে চায় তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক মেয়ে ব্যাংকার হতে চায়। অথচ তারা জানে না যে আমাদের দেশে ব্যাংকিং সেক্টরে মেয়েদের কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে যেখানে এভিয়েশন সেক্টরে পাইলটের চাকরি তুলনামূলকভাবে কম। অন্যান্য পেশাগুলো সম্পর্কে মেয়েদেরকে আরও বেশি জানানো সবার দায়িত্ব, তাদেরকে অন্যান্য পেশার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সীমাহীন স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিতে হবে।’
‘বিনিয়োগে অগ্রাধিকার, কন্যাশিশুর অধিকার’- এ বছর কন্যা দিবসের এই প্রতিপাদ্যকে সমর্থন করে মেয়েদের কোনো বিষয়গুলোতে কীভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে তা জানতে এবং জানাতে চাওয়াটা ছিল একমাসব্যাপী ক্যাম্পেইনটির একটি লক্ষ্য।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি সেক্টর পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার বলেন, ‘বিনিয়োগ বলতে কেবল অর্থনৈতিক বিনিয়োগই বোঝানো হয়নি, বরং পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের পালনীয় ভূমিকার কথা বলা হয়েছে যেগুলো মেয়েদের এগিয়ে যেতে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে। সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘Girl Talk_বলবো আমি শুনো সবাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেয়েরা নিজেরাই বলেছে তাদের কোন বিষয়গুলোর ওপর তাদের অভিভাবক, পরিবার ও সমাজ বিনিয়োগ করলে তারা নির্বিঘ্নে এগিয়ে যেতে পারবে।’
৪৫ শতাংশ মেয়ে বলেছে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা চায় যার মধ্যে ছেলে সন্তানের সঙ্গে ভেদাভেদ না করা, স্বপ্ন পূরণে বাঁধা না দেওয়া, লেখাপড়া করার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, পরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ সমাজ তৈরি করা এসবই রয়েছে। কেউ কেউ বলেছে যেন তাদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া না হয়, এমনও উত্তর এসেছে যেন পরিবারে অপর সন্তান কিংবা আত্মীয়র সঙ্গে তাকে তুলনা করে ছোট না করে। অর্থাৎ, পরিবারের সহযোগিতা, মেয়ে সন্তানকে সময় ও গুরুত্ব দেওয়া, নিরাপদ সমাজব্যবস্থা তৈরি করা, মানসিকভাবে মেয়েদের ছোট না করা, মেয়েদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা- এ সবই বিনিয়গের জায়গা এবং পরিবার, অভিভাবক, সমাজ সকলকেই মেয়েদের সামনে এগিয়ে নিতে এই বিনিয়োগগুলো করতে হবে।
- বিষয় :
- পেশাজীবী
- মেয়ে
- সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ