দেশেই পরিশোধন সম্ভব হরিপুরের নতুন কূপের তেল

ছবি- সমকাল
হাসনাইন ইমতিয়াজ
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪ | ০০:২১ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ | ০৭:০৩
হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রের সিলেট-১০ কূপে প্রাপ্ত ক্রুড অয়েলে (অপরিশোধিত তেল) ৬০ শতাংশ ডিজেল রয়েছে। এ ছাড়া ২০ ভাগ ন্যাপথা আর ২০ ভাগ রেসিডিউ (অবশিষ্টাংশ)। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) নমুনা বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই ক্রুড অয়েল এখানেই পরিশোধন করা যাবে।
সম্প্রতি নমুনা বিশ্লেষণের ফলাফল প্রতিবেদন আকারে পেট্রোবাংলার কাছে জমা দিয়েছে ইআরএল। কূপটি সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত।
হরিপুরে গ্যাসক্ষেত্রের নতুন কূপে গত ডিসেম্বরে তেল পাওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। ওই কূপে তিন স্তরে গ্যাস আর এক স্তরে তেলের সন্ধান মেলে। উপাদান বিশ্লেষণের জন্য ১০ লিটারের একটি নমুনা ইআরএলে পাঠানো হয়। গত ১০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে সেখানে তেল প্রাপ্তির ঘোষণা দেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সেদিন প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ১ হাজার ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল (১৫৯ লিটার) তেলের প্রবাহ পাওয়া যায়। তেলের মজুতের পরিমাণ জানতে আরও অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে। উত্তোলিত তেলের নমুনা তিনটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তেলের মজুত ৮-১০ মিলিয়ন ব্যারেল, যার মূল্য ৭ হাজার কোটি টাকা (অপরিশোধিত তেল ৫৬ টাকা লিটার হিসাবে)। ২০২ কোটি টাকায় সিলেট-১০ কূপ খনন করে চীনের কোম্পানি সিনোপ্যাক ৷
গত ১০ ডিসেম্বর সিলেট গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ নমুনা ইআরএলকে দেয়। তারা নমুনা বিশ্লেষণ করে ২৩ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন পেট্রোবাংলাকে জমা দেয়। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি সিলেট গ্যাসফিল্ডের কাছেও জমা দেয় ইআরএল।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান সমকালকে বলেন, প্রাপ্ত নমুনা কয়েক ধাপে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এই ক্রুড ইআরএলেই পরিশোধন করা যাবে বলে জানান তিনি।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার সমকালকে বলেন, প্রাপ্ত ক্রুডের নমুনা সিনোপ্যাক চীনে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট-১০ কূপের পাশেই আরও একটি কূপ খোঁড়া হচ্ছে গ্যাস তোলার জন্য। এই কূপ খননের সময় তেলের স্তরটি আবার যাচাই করা হবে।
বাংলাদেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে ১৯৮৬ সালে, হরিপুরের ৭ নম্বর কূপে। পরের বছর থেকে তেল উত্তোলন শুরু হয়। প্রায় সাত বছরে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলনের পর ১৯৯৪ সালে কূপটিতে তেলের চাপ (অয়েলহেড প্রেশার) প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
এর পর ২০১২ সালে সিলেটের কৈলাসটিলা ও হরিপুরে তেলের মজুত পাওয়ার ঘোষণা দেয় পেট্রোবাংলা। সে সময় সংস্থাটি জানায়, এই দুটি জায়গায় মজুত ১৩৭ মিলিয়ন ব্যারেল হলেও উত্তোলন করা সম্ভব হবে ৫৫ মিলিয়ন ব্যারেল। এর মধ্যে ১০৯ মিলিয়ন ব্যারেল রয়েছে কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে। বাকি ২৮ মিলিয়ন ব্যারেল রয়েছে হরিপুরে। অবশ্য পরে কূপগুলোতে তেল মেলেনি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, পেট্রোবাংলার তৎকালীন চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর নিজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই তেল পাওয়ার ঘোষণা দেন।
জানতে চাইলে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম সমকালকে বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রচুর গ্যাসের পাশাপাশি কিছু পকেট তেলের মজুত রয়েছে। নতুন কূপের তেলও এমন ছোট আকারের মজুত।