এক্সপ্রেসওয়ে ‘কাঁপাচ্ছে’ ঢাকার লক্করঝক্কর বাস

শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে থেকে তোলা ছবি- সমকাল
আব্দুল হামিদ
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ২০:৪২ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ২০:৪৪
ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়ার সুযোগে ঢাকা মহানগর এলাকার ‘লক্করঝক্কর’ অনেক বাস অনুমতি ছাড়াই চলাচল করছে ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে। এসব গাড়ি বিভিন্ন স্থানে থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। অনেকেরই লুকিং গ্লাস ও অ্যান্টিকাটার নেই। ফলে এক লেন থেকে আরেক লেনে যাওয়ার সময় পেছনের গাড়ি সম্পর্কে জানতে পারেন না চালক। কোনো কোনো চালকের লাইসেন্স নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। রয়েছে ‘গড়বড়ে’ ফিটনেস নিয়েও সন্দেহ। ফলে দ্রুত গতির এই সড়কে তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা মহাসড়কে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ থেকে মুগদা-মালিবাগ-বাড্ডা হয়ে উত্তরা ও গাজীপুর রুটে চলাচলকারী রাইদা; সদরঘাট থেকে গুলিস্তান-মগবাজার-মহাখালী-উত্তরা হয়ে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত চলাচলকারী আজমেরী গ্লোরী, বসুমতি ও স্বাধীন পরিবহনের বাস এবং যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইখাল হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত চলাচলকারী বাহাদুর শাহ’ লেগুনা ঢাকা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পাড়ি দিয়েছে পদ্মা সেতু। এ ছাড়া সাইনবোর্ড-যাত্রাবাড়ী-মতিঝিল-শাহবাগ-ফার্মগেট ও আসাদগেট হয়ে গাবতলী রুটে চলাচল করা ৮ নম্বর পরিবহনের বাস দেখা গেছে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে।
হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ে। শুধু মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ি দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব না। এই সুযোগটা নিয়ে ফিটনেস ও রুট পারমিট না থাকা গাড়িও আইন অমান্য করে হাইওয়ে-এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পড়ছে। যাত্রীরাও বাধ্য ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বাসে উঠছেন।’
এসব গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘পুলিশেরও আগে বিষয়টি বিআরটিএর দেখা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সচেতনতা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছুতেই হাইওয়েতে এসব গাড়িতে ওঠা উচিত নয়।’
সোহাগ পরিবহনের স্ক্যান কোচের চালক রেজাউল করিম বলেন, ‘ঢাকার মধ্যে চলাচল করা এসব ছোট গাড়ি মহাসড়কে উঠলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এগুলো সাধারণত ছোট গাড়ি, মহাসড়কে থামিয়ে যাত্রী তোলে, এদের অনেকে নির্দেশনা বোঝে না। কোনো কোনো বাস অপেশাদার চালক বা হেলপারও চালিয়ে থাকেন। মানুষের জান-মাল রক্ষায় বিষয়টির দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।’
আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের একটি বাস ঢাকা থেকে পিরোজপুর যাচ্ছিল। বাসটির কয়েকজন যাত্রী বলেন, ভালো ব্রান্ডের পরিবহনের চেয়েও ‘লক্করঝক্কর’ এসব বাসে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। এসব বাসে গুলিস্তান থেকে ভাড়া রাখা হচ্ছে কমপক্ষে ৮০০ টাকা। এটা রীতিমতো সুযোগ পেয়ে গলায় ছুরি ধরে টাকা আদায়ের মতো ব্যাপার।
গোপালগঞ্জ কাশিয়ানীতে ‘সাম্পান হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টারে’ যাত্রাবিরতি দেওয়া আরেক বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৭২৪৭) যাত্রী মো. ইয়ামিন বলেন, ‘মিরপুর-১ ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করি। ঈদের পরের দিন ঢাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পিরোজপুরে বাড়িতে যাচ্ছেন। ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এখন এই বাসে বসে দুর্ঘটনার আতংকে আল্লাহ আল্লাহ করছি।’
ঈদযাত্রায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশের টহল দেখা গেছে। সেখানে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ সন্দেহজনক বিভিন্ন গাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে ঢাকা মহানগর এলাকায় চলাচল করা এসব গাড়ি কীভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠল তা জানতে কেন তল্লাশি করা হচ্ছে না সেই রহস্যের উত্তর মিলল না।
হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘এসব গাড়ি সাধারণত মহাসড়কে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তবে ঈদের সময় যাত্রী পরিবহনে তারা হাইওয়ে রোডে ঢুকে পড়েছে। এসব গাড়ির বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। রোড পারমিটের বিষয়টি দেখভাল করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), তারাই বিভিন্ন সময় ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এসব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
- বিষয় :
- ঈদযাত্রা ২০২৪
- ঈদযাত্রা