দুঃখজনক বলছেন প্রতিমন্ত্রী, পাল্টা বিবৃতি উদীচীর
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান

ছবি-সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৩১
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, সরকারের নিরাপত্তা সংস্থা পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যে নির্দেশনা জারি করেছিল, তা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান করা ছিল হঠকারী ও দুঃখজনক। তাদের এই আচরণে সরকার ব্যথিত ও মর্মাহত। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে এবং যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়েছে। হলি আর্টিসান, শোলাকিয়া ময়দান ও সিলেটে ঈদের জামাতের জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং জনগণের জীবন বাঁচিয়েছেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানে সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সবসময় সতর্ক থাকায় নিকট অতীতে বাংলাদেশে জঙ্গিরা কোনো হামলা বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটাতে পারেনি। এ বিষয়ে সরকার সবার সহযোগিতা কামনা করে। নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের কর্তব্য। আশা করব, এ ক্ষেত্রে সবাই সবসময় সহযোগিতা করবেন; যাতে আনন্দের অনুষ্ঠান বিষাদে পরিণত না হয়ে যায়।’
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে অনুষ্ঠান উদীচী করেছে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নিত বলে প্রশ্ন তোলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা মনে করি নিয়ম বা নির্দেশ না মেনে অনুষ্ঠান যারা করবেন তাদেরই সে দায়দায়িত্ব নিতে হবে।
এর আগে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে গত কয়েক বছরের মতো এবারও বর্ষবরণের আয়োজন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ক্যাম্পাসে সব আয়োজন বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে। কিন্তু উদীচী সে নির্দেশনা মানবে না বলে ঘোষণা দেয়। তারা পহেলা বৈশাখে সন্ধ্যা ৬টা থেকে শাহবাগে ‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খল' শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে।
এদিকে প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে উদীচী। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বর্ষবরণ আয়োজন নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেন উদীচী নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি, আবহমান বাংলার সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ বা বাংলা বর্ষবরণ। সে জন্যই বহু বছর ধরে এ উৎসবের বিরুদ্ধে মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নানা অপপ্রচার ও কুৎসা রটিয়ে চলেছে। প্রতিবছর খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানালেও নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অবস্থানের সাযুজ্য রয়েছে। বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে নির্জলা আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুই নয়।
- বিষয় :
- উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী
- পহেলা বৈশাখ
- সচিবালয়