ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সংসদীয় কমিটিতে প্রতিবেদন

শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা খাতে ঘাটতি ৫৬০ কোটি

শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা খাতে ঘাটতি ৫৬০ কোটি

সংসদ ভবন

 সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৫৪ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ০৭:৪১

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকার বেশি। প্রতি বছরই এ ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাভাবে ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এ জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার অনিষ্পন্ন আবেদন নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার, মো. মোতাহার হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মো. আবদুল মজিদ, আহমদ হোসেন, মো. বিপ্লব হাসান এবং মো. আজিজুল ইসলাম অংশ নেন। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার অনিষ্পন্ন ৬১ হাজারের বেশি আবেদন নিষ্পত্তির জন্য সংসদীয় কমিটির সহায়তা চাওয়া হয়। অন্যদিকে এসব অনিষ্পন্ন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে। 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির প্রথম বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার আবেদন সময়মতো নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা সচিব সোলায়মান খান নিজেই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তিনি জানান, বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা খাতে বছরে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। ফলে একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকলেও তাঁর আবেদন নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে অর্থাভাবে অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীর প্রায় ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন। কল্যাণ ট্রাস্টে অনিষ্পন্ন ২৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলেও তিনি কমিটিতে জানান। পরে তিনি এ বিষয়ে কমিটির সহায়তা কামনা করেন।

কমিটিতে উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পেতে বছরে গড়ে ১৬ হাজার ৮০০টি আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পত্তির জন্য বছরে তাদের প্রয়োজন ৭২০ কোটি। কিন্তু এমপিও থেকে ৪ শতাংশ হারে কর্তন থেকে বছরে ৫৭৬ কোটি টাকা ও ব্যাংক সুদ থেকে বছরে ২৪ কোটিসহ বছরে তাদের আয় ৬০০ কোটি টাকা। বছরে তাদের ঘাটতি থাকছে ১২০ কোটি টাকা। অবসর সুবিধা বোর্ডের ২০২০ সালের আগস্ট থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ৩৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে বছরে প্রায় ১০ হাজার ৮০০টি আবেদন পড়ে। এগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন এক হাজার ৩২০ কোটি। শিক্ষকদের বেতন কর্তন থেকে বছরে আয় ৮৪০ কোটি ও ব্যাংকের এফডিআর থেকে আয় ৩৬ কোটি টাকা। এ খাতে বছরে ঘাটতি থাকে ৪৪৪ কোটি টাকা। বর্তমানে সরকারি কর্মচরীদের মতো শিক্ষকদেরও বার্ষিক বেতন প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে এ দুটি খাতে ঘাটতি আরও বাড়ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৈঠকে বলেন, চাকরি শেষে যে অবসর সুবিধা পাওয়ার কথা, সেটাও যথাসময়ে না পাওয়ায় তারা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এমনকি শেষ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় অবসর সুবিধা ভোগ না করেই অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

১২ হাজারের বেশি মামলা

দেশে ২৯ হাজার এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সংসদীয় কমিটিকে জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, দলাদলি, জমিজমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে বেশির ভাগ মামলা-মোকাদ্দমা হয়ে থাকে। বর্তমানে ১২ হাজারের বেশি মামলা চলমান। যে কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

উচ্চ শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষকের প্রচণ্ড অভাব উল্লেখ করে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আলমগীর বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যান, তার ৮০ শতাংশ দেশে ফেরেন না। গতকালের বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা প্রাপ্তি-সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য ও সৃষ্ট পদ খালি রয়েছে, তা দ্রুত পূরণ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

 

আরও পড়ুন

×