ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ

শিশু শ্রমিক এক দশকে বেড়েছে ৮৬ হাজার, প্রকল্প অকার্যকর

শিশু শ্রমিক এক দশকে বেড়েছে  ৮৬ হাজার, প্রকল্প অকার্যকর

.

 সাজিদা ইসলাম পারুল 

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪ | ০০:০২

করোনাকালে ২০২১ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. ফাহাদ সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। এরপর পেরিয়েছে তিন বছর। ক্লাসে আর ফেরা হয়নি তার। গত তিন বছর ধরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মাতবরবাজার রোডের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করছে সে। ফাহাদ জানায়, মূলত লোহা কাটার কাজ করতে হয় তাকে। কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই সে ওয়েল্ডিং মেশিন চালায়। অথচ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের তালিকায় ওয়ার্কশপও রয়েছে। 

ফাহাদের মতো এমন অসংখ্য শিশু-কিশোর শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পেটের তাগিদে শিশু শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। শিশু শ্রম প্রতিরোধে গত এক যুগে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প নেয় সরকার। বাস্তবতা হলো সেসব প্রকল্পের একটিও তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না। উল্টো শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত মার্চে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয়  শ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, দেশে শিশু শ্রমিক বেড়েছে সাড়ে ৮৬ হাজার। বর্তমানে দেশে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু শ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। বর্তমানে শিশু শ্রমিকের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। এমন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মতো আজ বুধবার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস। দিনটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিশু শ্রম বন্ধ করি, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি’। 

জানা গেছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের ফিরিয়ে কাজের মাধ্যমে আয়ের পথ করে দিতে ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ শিশুকে ৯টি বিষয়ের ওপর ছয় মাসের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাসের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে এ 
প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ফলে এসব শিশুকে ঝুঁকিমুক্ত কাজে ফেরানো যায়নি।
আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে শিশুদের নিয়োগ দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও এরইমধ্যে ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমের তালিকা প্রকাশ করেছে। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, তালিকায় থাকা প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতেই এখনও শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি ২০১০-এ বলা হয়েছে, শিশু শ্রমের প্রধান কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থা। নীতিমালায় দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শ্রম থেকে প্রত্যাহার ও দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের করে আনতে মা-বাবাকে আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তবে নীতিমালা প্রণয়নের ১৪ বছর পরও সেটি কার্যকর করা যায়নি।
শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, দেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধে আইন, নীতিমালা ও বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। তবে এগুলো বাস্তবানুগ নয় বলে তা ফলপ্রসূ হয়নি। ভবিষ্যতে যে কোনো প্রকল্প নেওয়ার আগে তা বাস্তবের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা যাচাই করার আহ্বান জানান তারা।
 

আরও পড়ুন

×