ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

যেভাবে ফাঁস হয় বিসিএসের প্রশ্নপত্র

যেভাবে ফাঁস হয় বিসিএসের প্রশ্নপত্র

সাজেদুল ইসলাম

 আব্দুল হামিদ

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ০০:১৯ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ০০:২৬

সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চক্রের হাতে চলে আসে এক সপ্তাহ আগেই। গ্রেপ্তারের পর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। সেখানে উল্লেখ করেন, পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহ করতেন তিনি। এজন্য ওই কর্মকর্তাকে এককালীন টাকা দিতেন তিনি। এবারও প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সাজেদুল দুই কোটি টাকা দেন জাফরকে। এরপর তাঁর চক্রের সদস্যদের দিয়ে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করে তাদের কাছে চুক্তিতে সরবরাহ করেন। 

মামলার তদন্ত তদারক সূত্র জানায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) আবদুল্লাহ আল মামুন এই পরীক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন। তারপরও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে না থেকেও দুই উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম চক্রের হাতে কীভাবে প্রশ্ন গেল, তা তারা তদন্ত করছেন।

পিএসসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রেলওয়ে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা টিমের সদস্যদের একে একে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যে দুইজন উপপরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা পরীক্ষার কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। তারপরও তাদের হাতে কীভাবে প্রশ্ন গেল, এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ পরীক্ষা বিভাগের নয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাখারই কেউ চক্রের থাকতে পারেন।

পিএসসির যুগ্মসচিব ড. আব্দুল আলীম খান বলেন, পিএসসি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে। ওই পরীক্ষায় দায়িত্ব থাকা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এতে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গত ৭ জুলাই পিএসসির দুই উপপরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে সাবেক এক সহকারী পরিচালকসহ ১৪ আসামি। গত ৯ জুলাই ৩১ জনের নামে পল্টন থানায় মামলা করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে সাজেদুল জানান, রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে চার সেট প্রশ্ন ও উত্তরপত্র উপপরিচালক আবু জাফরের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সহযোগী খলিলুর রহমান, প্রিয়নাথ রায়, সাখাওয়াত হোসেন, নোমান সিদ্দিকীর মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করেন। পরে তাদের ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রেখে পরীক্ষার আগের রাতে পড়িয়েছেন। 

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, সাজেদুল নগদ টাকা দিয়ে পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্তাদের থেকে প্রশ্নপত্র কিনতেন। পরে তিনি নিজেও পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করতেন। এতে তাঁর ঝুঁকি কম থাকত। পরীক্ষায় কোনোভাবে প্রশ্ন এলোমেলো হলে টাকা দিতে চাইতেন না প্রার্থীরা। এ জন্য সাজেদুল কৌশলে বিনিয়োগের টাকা উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেন।

গতকাল শনিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বলেন, প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর পিএসসির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা নিশ্চত হওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

×