ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

টিএসসিতে ত্রাণ দিতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি

ভেদাভেদ ভুলে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সবাই

এক দিনে উঠল ৮৬ লাখ টাকা

ভেদাভেদ ভুলে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সবাই

ত্রাণ সংগ্রহের আহ্বানে হাজারো মানবিক হাত। রাজধানীর টিএসসিতে শুক্রবার বিকেলে- সমকাল

 বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:০৩

আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের অন্তত ১১টি জেলা। দুর্গতদের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচি শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুক্রবার এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে টিএসসি এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। সব ভেদাভেদ ভুলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ নগদ অর্থ, কেউবা শুকনো খাবার, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি ত্রাণের জন্য জমা দিয়েছেন। এ সময় ত্রাণ দিতে আসা মানুষের ঢল সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকদের। 

সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে অসংখ্য মানুষ সারিবদ্ধভাবে ছাত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে ত্রাণ জমা দেন। ছিল সারি সারি গাড়ি; সবই ত্রাণভর্তি। এ সময় প্রাইভেটকারে এসে কেউ লাখ টাকা যেমন অনুদান দিয়েছেন, তেমনি নিজের জমানো ছোট্ট ব্যাংক জমা দিয়ে গেছে অনেক স্কুলপড়ুয়া। এমনকি ভিক্ষুকও এসে জমা দিয়েছেন নগদ অর্থ। বিজিবির একটি গাড়ি এসেও ত্রাণ দিতে দেখা যায়। একের পর এক ত্রাণভর্তি খাবার আসছে এবং আনলোড হচ্ছে। টিএসসির প্রবেশপথের বুথে লিপিবদ্ধ হয়ে তার পর সেসব ত্রাণসামগ্রী স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে হাতে পৌঁছাচ্ছে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষে। সেখান থেকে প্যাকেজিং করে ত্রাণসামগ্রী রাখা হয়েছে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায়। এর পর খাবারগুলো ট্রাকে উঠিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বন্যাকবলিত এলাকায়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জমা দেওয়া ত্রাণের মধ্যে নগদ অর্থ, শুকনো খাবার ছাড়াও আছে স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাড, জরুরি ওষুধ, মোম, দিয়াশলাই, গুড়, নানা রকম পোশাক এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।

এদিন যাত্রাবাড়ী থেকে ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ মামুন এসেছিলেন ত্রাণের অর্থ জমা দিতে। তিনি বলেন, বন্যায় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। আমি আক্রান্ত হলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতাম। যেহেতু আমি আক্রান্ত হইনি; তাই আমার কর্তব্য সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্গতদের পাশে থাকা। 

মায়মুনা হাসান নামে এক চাকরিজীবী বলেন, আমি বাড্ডা থেকে এসেছি। টিএসসি ঘুরতে এসে সহায়তা করেছি। দিনশেষে দেশটা তো আমাদের সবার। 

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের রুদ্র শুব বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মন্দির পরিদর্শন করতে আসা মানুষ ও পরিচিতদের থেকে ২৫ হাজার টাকার ফান্ড সংগ্রহ করতে পেরেছি। সেই টাকা দিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনে দিয়েছি এখানে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার ত্রাণ সংগ্রহের পর রাতে পাঁচটি ট্রাক টিএসসি থেকে বন্যাদুর্গত এলাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। শুক্রবার ১০টি ট্রাক যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে যে পরিমাণ ত্রাণ আসছে, আরও ২০টি ট্রাকের খোঁজ করা হচ্ছে। 

আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, রাত ৮টা পর্যন্ত টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচি থেকে ৮৬ লাখ ২২ হাজার ১৭২ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধু শেষ এক ঘণ্টায় সংগ্রহ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা ত্রাণ জমা হয়েছিল। 

 

আরও পড়ুন

×