ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মধুপুরের আনারস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী পেল জিআই সনদ

মধুপুরের আনারস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী পেল জিআই সনদ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২২:০৮

জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) সনদ পেয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী আরও দুই পণ্য মধুপুর গড়ের আনারস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি। এতে দুই জেলাতেই চলছে উদযাপন। গত মঙ্গলবার এ দুই পণ্যের জিআই সনদপ্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। এর মধ্যে মধুপুর গড়ের আনারসের জিআই নম্বর ৫২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীর ৪১।

মধুপুর গড়ের আনারস স্বাদ ও ঘ্রাণে অনন্য। গড় অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসলও এটি। জিআই স্বীকৃতি মেলায় বহুল প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক বাজার পাবে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন অনেকে। বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্র উৎপাদনে এবার আনারস চাষে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, উপজেলার ইদিলপুর গ্রামে গারো সম্প্রদায়ের মিজি দয়াময়ী সাংমার হাত ধরে ১৯৪২ সালের দিকে মধুপুর অঞ্চলে প্রথম আনারস চাষ শুরু হয়। তাঁর উত্তরসূরিরা জানান, মিজি দয়াময়ী ভারতের মেঘালয়ের এক আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আনারস চাষ দেখে আগ্রহী হন। পরে তিনি কিছু চারা নিয়ে দেশে ফিরে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। পরিবেশের কারণে অসাধারণ সুস্বাদু ও ঘ্রাণের এ আনারসের চাষ পরে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। 

বর্তমানে হানিকুইন জায়েন্টকিউ ও জলডুগি জাতের আনারস মিলিয়ে মধুপুর গড় অঞ্চলে ৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আনারসের চাষ হয়। জাতীয় পদকপ্রাপ্ত সিআইপি কৃষক গারো বাজারের ছানোয়ার হোসেন বলেন, মধুপুরের আনারস বাজারজাতে যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, নানা কারণে আশানুরূপ হচ্ছিল না। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় একটা আশার জায়গা তৈরি হলো। তবে আন্তর্জাতিক বাজার ধরে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে হলে আনারস চাষে পরিবর্তন আনতে হবে। 

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্মী বলেন, আনারস মধুপুর ছাড়াও সিলেট, পার্বত্য এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হয়। তবে মধুপুরের আনারস পরিবেশগত কারণে স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের জিআই স্বীকৃতি লাভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধুপুরের আনারসের এ স্বীকৃতি স্থানীয়দের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী ছানামুখী মিষ্টির খ্যাতি শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম এ ছানামুখী তৈরি হয় বলে জানা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মহাদেব মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক স্বপন মোদক বলেন, প্রায় ১৮০ বছর আগে তাঁর পূর্বপুরুষ মহাদেব পাঁড়ে ভারতের কাশীধাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় তিনি ছানামুখীসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করে ক্রেতাদের মন জয় করেন। ছানামুখীর জিআই স্বীকৃতি লাভে তিনি খুবই আনন্দিত। 

তিনি জানান, এক কেজি ছানামুখী তৈরিতে সাত-আট লিটার গরুর দুধ লাগে। প্রতি কেজি ছানামুখী এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। 
আদর্শ মাতৃভান্ডারের মালিক রাখাল মোদকের ছেলে দুলাল চন্দ্র মোদক বলেন, মানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করা হয় না বলেই দেশ-বিদেশে ছানামুখীর এত কদর। অত্যন্ত সুস্বাদু এ মিষ্টান্নের মান বজায় রাখতে আমরা সচেষ্ট। 

আরও পড়ুন

×