ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আইনশৃঙ্খলার জরুরি উন্নতি দাবি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের

আইনশৃঙ্খলার জরুরি উন্নতি দাবি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের

প্রতীকী ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:৪৫ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৯:০৯

জরুরি ভিত্তিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমানো এবং শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কারখানা নিরাপত্তার জন্য নজর দেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়ছে।

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দিকে। এ ছাড়া তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখা, সুশাসন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন ও সংস্কার এবং সহায়ক বাণিজ্য নীতি প্রণয়নে সরকারকে আরও উদ্যোগী হওয়াসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানান। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে বিশেষ করে আর্থিক খাতে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা অকল্পনীয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি। ব্যাংক থেকে আমানতের টাকা নিয়ে চলে গেছে, যার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। এত অনিয়ম-দুর্নীতির পর তিন থেকে চার মাসে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে কেউ আর টাকা পাচার করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো খুবই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।

ব্যবসায়ী নেতাদের বেসরকারি খাতে ঋণের সুদ কমানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নীতি সুদহার আপাতত বাড়ানো হবে না। বেসরকারি খাতে যেন ঋণপ্রবাহ কমে না যায়, সেদিকে সরকার নজর রাখছে। তবে মূল্যস্ফীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ও সুদের হার ব্যবস্থাপনার এ অবস্থার উত্তরণ হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ে বেসরকারি খাতের অভিযোগ রয়েছে। সব আইনই ব্যবসা সহায়ক হওয়া প্রয়োজন। এনবিআরের কার্যক্রমে অটোমেশন করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ট্যাক্স পলিসি ও ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে আলাদা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এলডিসি থেকে বাংলাদেশ বের হলে পোশাক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে কিছু জায়গায় টার্গেট করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে নিজেদের যোগ্যতা এবং দক্ষতা দিয়ে ব্যবসা করতে হবে, স্বজনপ্রীতি দিয়ে নয়। মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোরও পরামর্শ দেন তিনি।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বছরের শুরুতেই সুদহার কমিয়ে আনার পাশাপশি সরকারি ব্যয় কমানো, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে।

ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির আব্দুল হাই সরকার বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত ছাড়া শিল্প উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে ব্যবসার উন্নয়ন আসবে। প্রয়োজনের সময় এলসি খুলতে না পারলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই ব্যাহত হবে। 

ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি আব্দুল মোক্তাদির বলেন, উচ্চ আমদানি শুল্ক হারের কারণে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ছোট ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতি পার করছেন। কয়লার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিলে শিল্প খাতে আরও বেশি হারে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে। বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ব্যবসা শুরু করতে গেলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। এটি বন্ধ করতে হবে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদান না করায় ব্যবসায়ীদের উচ্চ মূল্যের গ্যাস দিয়ে শিল্পকারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানা মালিকরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে।  তিনি বলেন, ২০২৬  সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ স্থগিত করা দরকার। কারণ সবাই এখন বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছিল বেশ কিছু ভুল তথ্যের ভিত্তিতে। এখন আমদানি ক্রমাগত কমছে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্যসংযোজনও কমছে। গ্যাস সংকটে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে এ ধরনের পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। তিনি বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে রাজনীতির বাইরে রাখার আহ্বান জানান।    

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা, ধারাবাহিকতা ও সক্ষমতা অপরিহার্য। এলডিসি উত্তরণের বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিই যথেষ্ট নয়, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি বন্ধসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি করতে হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের মামলাজট নিরসনে তিনি আরও বেশি আদালত ও বিচারপতি নিয়োগের আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

×