নববর্ষ উদযাপনে ঢাকায় শব্দদূষণ বাড়ে ৭৪%

কোলাজ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪০ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৮:৫১
দিন দুয়েক পরই আসছে বর্ষবরণের রাত। বছরের এই সময়ে এমনিতে বায়ুদূষণ থাকে তুঙ্গে, তার ওপর আতশবাজিতে দূষণের মাত্রা চলে যায় বিপজ্জনক পর্যায়ে। খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণে উচ্চ শব্দে গানবাজনা, ফানুস ওড়ানো আর পটকার শব্দ থাকে সহ্যক্ষমতার বাইরে। আতশবাজি, পটকা ফুটানো ও ফানুস ওড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। এর ফলে রাজধানীতে গত সাত বছরে আগের দিনের (৩১ ডিসেম্বর) তুলনায় পরদিন (১ জানুয়ারি) বায়ুদূষণ বাড়ে গড়ে ১৯ শতাংশ। একই কারণে এক দিনের ব্যবধানে শব্দদূষণ বাড়ে গড়ে ৭৪ শতাংশ।
নববর্ষে আতশবাজি পোড়ানো-ফানুস ওড়ানোর কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ নিয়ে এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস) এ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে আতশবাজি-ফানুসমুক্ত নববর্ষ উদযাপনের দাবি জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শব্দদূষণের ক্ষেত্রে ৩০ ডিসেম্বরের (রাত ১১টা থেকে ১টা) সঙ্গে পরদিন ৩১ ডিসেম্বরের (রাত ১১টা থেকে ১টা) তুলনা করা হয়।
রাজধানীর কিডস টিউটোরিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়াজিহা জামান তার ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলে, সব শিশু আতশবাজির শব্দে আনন্দিত হয় না, অনেকে ভয়ও পায়। তাই সবার কাছে অনুরোধ, বর্ষবরণে আতশবাজি না পুড়িয়ে অন্য কোনো পরিবেশবান্ধব উপায়ে উদযাপন করুন। প্রধান উপদেষ্টার কাছেও আমার অনুরোধ, তিনি যেন আতশবাজি পোড়ানো এবং ফানুস ওড়ানো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার গবেষণার ফল উপস্থাপন করে বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনের সময় ধরে এ গবেষণার কাজ করেছেন। এ ছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের জরিপ ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের তথ্য নিয়ে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষকরা সাত বছর ৩১ ডিসেম্বর রাতের সময়টার ঢাকার বায়ুমান নির্ণয় করেছেন। তারা দেখেছেন, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঢাকায় এই সাত বছরে আগের দিনের তুলনায় পরদিন সর্বোচ্চ ৬৬ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ পর্যন্ত বায়ুদূষণ বেড়েছিল। এই সময়ে বায়ুদূষণ গড়ে বেড়েছিল ১৯ শতাংশ। করোনার সময় (২০২১-২২ সাল) দূষণ কমে গিয়েছিল। কারণ, সে সময় মহামারির প্রেক্ষাপটে আতশবাজি পোড়ানো ও ফানুস ওড়ানো হয়নি।
গবেষণায় বলা হয়, সাত বছরের মধ্যে বায়ুমান সূচক কখনোই ভালো অবস্থানে ছিল না। বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে তাকে ‘ভালো বায়ু’ বলা হয়। সে ক্ষেত্রে গত সাত বছরে নির্দিষ্ট দুই দিনে (৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি) কখনোই বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যের বিশ্রাম ও শান্তি নষ্ট করে– এমন কোনো কিছুই করা যাবে না। এখানে যেভাবে নববর্ষ উদযাপন করা হয়, তা সাংস্কৃতিক হুমকি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, উৎসবের জন্য নগরকে গড়ে তোলা হয়নি।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কিছু সুপারিশ করেছে ক্যাপস। এর মধ্যে রয়েছে– আতশবাজি-ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখিসহ বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তায় সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার।
এদিকে গতকাল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থার্টিফার্স্ট নাইটে (৩১ ডিসেম্বর রাতে) জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে নগরবাসীকে অনুরোধ করেছে।