ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জুলাই বিপ্লবের খসড়া ঘোষণাপত্র

সংবিধানের সংস্কারের দায়িত্ব পাবে অন্তর্বর্তী সরকার

সংবিধানের সংস্কারের দায়িত্ব পাবে অন্তর্বর্তী সরকার

ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৩১

আগামী ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ইতোমধ্যে ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া তারা তৈরি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দেওয়া হবে পাশাপাশি সংবিধান সংস্কারেরও বৈধতা দেওয়া হবে।

অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলের নেতা-কর্মীরা থাকবেন বলে আশা করছেন তারা। পাশাপাশি সব শহীদ পরিবার আহতরাও থাকবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের দাবি জোরালো করা হবে।


ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সমকাল পেয়েছে। এতে ১৯৪৭ সালে উপনিবেশ থেকে মুক্তি, পাকিস্তানের বৈষম্য এবং লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যেখানে বাহাত্তরের সংবিধান লাখো শহীদের স্বপ্ন সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ এবং গণতন্ত্রের ভাঙন এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয়ের পথ প্রশস্ত করেছে; সামরিক আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক স্বার্থে সংবিধান সংশোধন রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে তুলেছিল; ১/১১ এর ঘটনা ঘটেছে।  

যেখানে সামরিক, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিককরণ করা হয়েছে; গত দেড় দশক ধরে নৃশংস শক্তি দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করে জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ব্যাপক আকার ধারণ করেছে; পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংসতা এবং প্রহসনমূলক বিচারব্যবস্থা দ্বারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে; ভারতবিরোধী কর্মীদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল, জোরপূর্বক গুম করা হয়েছিল বা তাদের জন্য হত্যা করা হয়েছিল; পরপর তিনটি নির্বাচন অবৈধ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে; ফ্যাসিবাদী হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্য এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিক্ষোভে নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগ, হয়রানি বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের আক্রমণ, নয়দফা দাবির প্রতি বর্বরতা, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ এবং সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, আমরা-বাংলাদেশের ছাত্র এবং সাধারণ জনগণ ব্যাপক জনসমর্থন অর্জন করেছি; হাজারেরও মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন; আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই; আমরা-বাংলাদেশের ছাত্র ও জনগণ কোনো সামরিক শাসন বা ১/১১ সমঝোতার ধারাবাহিকতা চাই না; আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক রাজবন্দি, নেতা-কর্মী ও ছাত্র নেতার মুক্তি চাই। আমরা, বাংলাদেশের ছাত্র ও জনগণ নিশ্চিত করছি যে, যথাযথভাবে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিষ্ঠান ও সংবিধানের সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হবে; আমরা, বাংলাদেশের ছাত্র এবং জনগণ, বলবৎকৃতদের বিচার ও সুষ্ঠু বিচার চাই- গুম, গত দেড় বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জুলাইয়ের গণহত্যার—খসড়া ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার রাজধানীর বাংলা মোটরে জুলাই প্রোক্লেমেশন নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে এবং আওয়ামী লীগ দল হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে বাংলাদেশে।

তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঘিরে আমাদের যে গণ আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, ‘৭২ এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে মানুষ যে রাস্তায় নেমে এসেছে, সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করার জন্য ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ ঘোষণা করব।

হাসনাত বলেন, আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-অভিপ্রায় এবং ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকবে এই প্রোক্লেমেশনে। এটা কোনও দলের বা শ্রেণির প্রোক্লেমেশন না। ‘৭২ এর যে সংবিধানের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, মুজিববাদী চেতনার বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে মানুষ দাঁড়িয়েছে—আমরা চাই সেটির স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বিগত যেসব ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেনি এবং নতুন যেসব ব্যবস্থা চালু হবে, তার মধ্যে পার্থক্য হিসেবে এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের একটি দলিল হয়ে থাকবে। যারা দেশ পরিচালনায় আসবেন, এই ঘোষণাপত্র তাদের জন্য একটি নির্দেশক হিসেবে থাকবে। এখানে বাংলাদেশের সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

জানতে চাইলে ঘোষণাপত্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। তিনি সমকালকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পরবর্তী বাহাত্তরের সংবিধানে প্রতিফলিত হয়নি। এই সংবিধানের উপর ভিত্তি করে বাকশাল হয়েছে এবং হাসিনার মত ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সংবিধানটি বাতিল হয়ে গেছে। ফলে আমরা বলছি এখানে নতুন সংবিধান লাগবে। নতুন সংবিধানের জন্য প্রোক্লেমেশন দরকার।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সাল, ১৯৭১ সাল এবং ১৯৯০ সালের সেটেলমেন্টগুলোতে অনেক মানুষের আত্মত্যাগ আছে যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিকরণ করা হয়নি। এবার চব্বিশে এসে আমরা সবগুলো প্রাতিষ্ঠানিকরণ করতে চাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, মিডিয়া সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×