হাসিনা-মোদি বৈঠক ঘিরে আগ্রহ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ | ১৩:২৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দিল্লিতে আগামীকাল শনিবার
অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন
ধরে আলোচনায় থাকা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও আসামের জাতীয়
নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ইস্যু নিয়ে কার্যকর আলোচনা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন
কূটনৈতিক বিশ্নেষকরা। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত
দৃঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা তাদের।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে
যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় বার বার উত্তীর্ণ হয়েছে। অতি
সম্প্রতি নিউইয়র্কে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে
জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে ভারতীয় মিশনে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে ছয়জন
সরকারপ্রধানের মধ্যেও আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি
সেখানে অসাধারণ বক্তব্যও রেখেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে।
অতএব বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্বের পাশাপাশি পারস্পরিক মর্যাদার
আদান-প্রদানের সম্পর্কও গভীর। এ কারণেই বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর
মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সব সময়ই তাৎপর্যপূর্ণ।
গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবেই তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি
জানান, এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়
নিয়েই আলোচনা হবে। তবে আলোচনায় ১১টি বিষয় প্রধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও
চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি, উভয় দেশের মধ্যে জনযোগাযোগ
বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী উদ্যেগ গ্রহণ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতীয়
ভিসা থাকা সাপেক্ষে আরও অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্ত্রাসবাদ রোধ
এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি,
সার্বিক বাণিজ্যিক ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর
আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং ও অ্যান্টি-সারকামভেশন শুল্ক্ক প্রত্যাহার নিয়ে
আলোচনা হবে।
ওয়ালিউর রহমান বলেন, এবারের বৈঠকে বিশেষভাবে ভারতের আট বিলিয়ন ডলারের লাইন
অব ক্রেডিট আরও সহজে অবমুক্ত (ডিসবার্সমেন্ট) করা যায় তা অবশ্যই প্রাধান্য
পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দু'দেশের জনগণের ভেতরে আন্তঃসম্পর্ক
বৃদ্ধির প্রসঙ্গটিও গুরুত্ব পাবে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে এর আগেও
প্রতিশ্রুতি এসেছে। আলোচনা হয়েছে। এ সংকটের সমাধান কোথায় আটকে আছে সেটাও
সবারই জানা। অতএব এবারের আলোচনায় তিস্তা নিয়ে চূড়ান্ত সমাধান না হলেও
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টিতে আরও অগ্রগতি হবে, সেটা নিঃসন্দেহে
বলা যায়।
তিনি বলেন, এনআরসির বিষয় নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এর আগেই নিউইয়র্কে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এ নিয়ে
বাংলাদেশের চিন্তার কিছু নেই। এবারের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই
বক্তব্যটিই আরও স্পষ্ট ও জোরালো করবেন বলেই প্রত্যাশা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর সমকালকে বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর
মধ্যে এটা নিয়মিত বৈঠক। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভেতরে নিয়মিত বিরতিতেই
দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক
হয়। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়, অনেক বিষয়ে অগ্রগতি হয়। বেশ
কিছু সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এগুলো দু'দেশের ভেতরে সহযোগিতার
সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়। তবে যে ইস্যুগুলোতে আলোচনার ব্যাপারে অনেকের কৌতূহল ও
আগ্রহ রয়েছে সেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গ কিংবা
সাম্প্রতিক সময়ের এনআরসি প্রসঙ্গ কার্যকর নিয়ে আলোচনা হবে, সেই প্রত্যাশা
আছে। তবে এ আলোচনা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রগতির বিষয় নিয়ে এখনই কিছু বলা
যাবে না। এ জন্য বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আগামীকাল সকালে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের
মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলেও
সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
- বিষয় :
- হাসিনা-মোদি বৈঠক