ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

একই পথে বারবার বাসে লুট

একই পথে বারবার বাসে লুট

কোলাজ

সাহাদাত হোসেন পরশ, ঢাকা ও গোবিন্দ আচার্য্য, সাভার

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ০৮:১৮

আতঙ্কের আরেক নাম হয়ে উঠেছে রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। একের পর এক বাসে ছিনতাই হচ্ছে। দিনদুপুরেও রেহাই পাচ্ছেন না যাত্রীরা। কিছুই পরোয়া করছে না ছিনতাইকারীরা।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার আধা ঘণ্টা ব্যবধানে দুই চলন্ত বাস ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে। দুপুর ১২টার দিকে সাভার ব্যাংক টাউন এলাকায় ঢাকাগামী সাভার পরিবহন লিমিটেডের বাসচালককে জিম্মি করে তিন নারী যাত্রীর স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভার সিঅ্যান্ডবি এলাকায় নবীনগরগামী রাজধানী পরিবহনের চলন্ত বাসে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পৃথক আটটি ঘটনায় বাসে লুটপাট হয়। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল মহাসড়কের ব্যাংক টাউন এলাকায় ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসের যাত্রীদের ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী এক নারী।

শুক্রবারের ঘটনার ভুক্তভোগী সাভার পরিবহনের যাত্রী স্থানীয় সাংবাদিক তায়েফুর রহমান সমকালকে জানান, শ্যামলীর উদ্দেশে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি ব্যাংক টাউন থেকে সাভার পরিবহনের বাসে ওঠেন। কিছুদূর পরে বাসটি সেতুতে উঠলে তিন-চারজন ছুরি হাতে যাত্রীদের ভয় দেখায়। তাঁর স্ত্রীর গলা থেকে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে নেয় তারা। অন্যান্য নারী যাত্রীর কাছ থেকেও একইভাবে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে দ্রুত টাউন হল এলাকার সেতুর কাছে নেম যায় দুর্বৃত্তরা।

তিনি বলেন, ২০-২৫ যাত্রী থাকলেও কারও কাছ থেকে তারা মোবাইল ফোন নেয়নি। মূলত নারীদের টার্গেট করে ছিনতাইকারীরা। পরে চালক বাস চালিয়ে গাবতলী পৌঁছালে যাত্রীরা তাকে মারধর করে একটি কাউন্টারে আটকে রাখেন। আমার ধারণা, চালক ও সহকারী এ ঘটনায় জড়িত। তাদের আইনের আওতায় নিলে হয়তো জড়িতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যেতে পারে।

গতকাল সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়া বাসের যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, সিঅ্যান্ডবির আগে রাজধানী পরিবহনে তিন যুবক ওঠে। তারা ছুরি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়।

সম্প্রতি সাভারের মহাসড়ক ও চলন্ত বাসে ছিনতাই প্রতিরোধে  ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা জেলা পুলিশ। পুলিশের এ কার্যক্রমের মধ্যেই গতকাল দুটি বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল।

সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা বলেন, ‘শুক্রবার সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ছিনতাইয়ের সত্যতা এখনও পাইনি। ব্যাংক টাউন এলাকায় বারবার বাসে ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসছে। এটি ষড়যন্ত্র কিনা, তদন্ত চলছে। সিসি ক্যামেরা বসানোর চিন্তা করছি।’ তিনি জানান, গত দুই মাসে এ মহাসড়ক থেকে ছুরিসহ ১৮ ছিনতাইকারীকে ধরা হয়েছে। বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা সমকালকে বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ব্যাংক কলোনি এলাকায় হয়তো একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, শুক্রবার আধা ঘণ্টার  ব্যবধানে দুটি বাসে ছিনতাইয়ে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যারা ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িত, সেই তালিকা ধরেও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

জানা যায়, সারাদেশে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ১ হাজার ৪০০ জনের তালিকা করেছে হাইওয়ে পুলিশ। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত মহাসড়কে ডাকাতির বিভিন্ন ঘটনায় জড়িতরা তালিকায় রয়েছে।

বারবার ছিনতাইয়ে আতঙ্ক
গত ২৫ মার্চ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে শুভযাত্রা বাসের চালক আলী হোসেন, সহকারী মো. সোহেল ও আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২ মার্চ মহাসড়কের সাভার ব্যাংক টাউন এলাকায় চলন্ত বাসে যাত্রীদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুট করা হয়। ঢাকাগামী রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ২০-২৫ যাত্রীর মোবাইল ফোনসেট, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

১৪ ফেব্রুয়ারি সাভারের পুলিশ টাউন এলাকায় ঢাকাগামী শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তাদের ছুরিকাঘাতে তিন যাত্রী আহত হন। বাসটি মানিকগঞ্জ থেকে গুলিস্তানে যাচ্ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রী উঠাতে থামালে দু’জন যাত্রীবেশে ওঠেন, পরে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেন। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা বাসের পেছনের দিকের যাত্রীদের কাছ থেকে বাধা পায়। এ সময় তারা ওই যাত্রীদের আঘাত করে বাস থেকে নেমে যায়।

বাসটির যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৫-২০ যাত্রী ছিলেন। প্রথমে যাত্রীদের সঙ্গে দু’জনের তর্ক হয়। ভাবছিলাম ভাড়া নিয়ে ঝামেলা চলছে। পরে বুঝতে পারি, তারা ছিনতাইকারী। এক পর্যায়ে পেছনের দিকে বসা এক নারীর গলার চেইন ধরে টান মারে। পরে ছিনতাইকারীরা চালকের সহকারীসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

২০ ডিসেম্বর মহাসড়কের রেডিও কলোনি থেকে সিঅ্যান্ডবি এলাকার মাঝামাঝিতে ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি হয়। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন মহাসড়কে তারা নেমে যায়। ডাকাতের ছুরিকাঘাতে অন্তত চারজন আহত হন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ওয়েলকাম পরিবহনের বাসটি সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এলে ছিনতাইকারীরা যাত্রীবেশে ওঠে। চলন্ত বাসেই তারা যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে টাকা, মোবাইল ফোনসেটসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের মূল্যবান সামগ্রী লুটে নেয়।

বাসটির যাত্রী ফরহাদ আলী বলেন, ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল ফোনসেট টাকা লুট করে। এক পর্যায়ে গাড়ির চালক লাইট বন্ধ করে দিলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। 

সম্প্রতি চলন্ত বাসে ছিনতাই রোধে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে ঢাকা জেলা পুলিশ। গত ৫ এপ্রিল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যেও ছিনতাই বন্ধ হচ্ছে না। ছিনতাইকারী ও ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে উঠে দেশীয় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালপত্র লুটে নিচ্ছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অনেকে থানায় মামলা করছেন। কেউ কেউ আবার ঝামেলা এড়ানোর জন্য থানা-পুলিশ থেকে বিরত থাকছেন। কেবল মামলার ঘটনাই প্রকাশ্যে আসছে।

আরও পড়ুন

×