ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ভোক্তা-চাষি দুপক্ষকেই বাঁচাতে হবে

ভোক্তা-চাষি দুপক্ষকেই বাঁচাতে হবে

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫ | ০০:৫৩ | আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ | ১১:২৫

খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে কৃষকের কথা তেমন ভাবা হয় না। শহুরে মানুষের খাদ্য জোগান ও দাম নাগালে রাখতে আমদানির মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি করার চেষ্টা হয়। খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে হবে, যাতে ভোক্তা ও চাষি দু’পক্ষই লাভবান হন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত কৃষি, নিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে তিন উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা, পরিবেশবিদসহ এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আগস্টে বন্যার কারণে ডিমের দাম যখন বেড়েছিল, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি করে। সে সময় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে শুধু কোরবানির জন্য ১ কোটি ২৪ লাখের বেশি গরু-ছাগল মজুত আছে। চাহিদার চেয়ে ২২ লাখের মতো বেশি আছে। আমদানি করলে খামারিরা টিকতে পারবে না। খাদ্য নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত খাদ্য সার্বভৌমত্বে। খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের অধিকার নিশ্চিত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দুই মাসের মধ্যেই কৃষি সুরক্ষা আইন পাস করতে পারবে বলে আশা করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ‘কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি এবং প্রাণ-প্রকৃতি– এই তিন বিষয়ের সমন্বয় ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস গ্রহণযোগ্য নয়। আধুনিক কৃষির নামে অনেক কিছু এ দেশে আনা হচ্ছে, যা অন্য দেশে অনুমোদনই নেই।

‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ শীর্ষক অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, তথ্য-উপাত্ত ঠিক না থাকায় মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি হচ্ছে। বাণিজ্যের সব খাতে সঠিক তথ্য না থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।  

অন্যেরা যা বললেন
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেছেন, জনসংখ্যা বাড়ার হার বিবেচনায় নিয়ে কৃষির উন্নয়নে ২৫ বছরের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ পরিকল্পনা কৃষির আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, পোশাকসহ অনেক খাতকে দেশের চালিকাশক্তি মনে করা হলেও চিরাচরিত ব্যবস্থায় রয়ে গেছে কৃষি। এটিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হি‌সে‌বে স্বীকৃতি দি‌তে হ‌বে।

তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) উপাচার্য আব্দুর রব।

ভূমির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিমালা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি খুশী কবির। 
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে একই জমিতে বারবার চাষ করার প্রযুক্তি নেওয়ার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। 

কৃষিতে সংকট দূর করতে কৃষি কমিশন গঠন করা জরুরি বলে মনে করেন ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের আয় ন্যায্যতা নিশ্চিতে গবেষণায় ও প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী।
 

আরও পড়ুন

×