ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিশ্লেষণ

বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণ বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাত্র

বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণ বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাত্র

ড. কবিরুল বাশার

ড. কবিরুল বাশার

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫ | ০০:৫৬ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ | ০৯:৫০

বরগুনায় যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে, সেটা আমি আগেই বলেছিলাম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা কলামে এই বিষয়টি আমি তুলে ধরি। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলাম। একটি এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিত কিংবা ভাইরাসবাহিত রোগ বৃদ্ধির পেছনে একটি ‘এপিডেমিওলজিক্যাল ট্রায়াঙ্গেল’ (মহামারির চক্র) থাকে। এই চক্রে তিনটি বিষয় থাকে। একটি হলো, ‘হোস্ট’ (পোষক বা মানুষ), দ্বিতীয়টি  ‘প্যাথজেন’ (জীবাণু বা ডেঙ্গু) এবং সর্বশেষ হলো ‘ভেক্টর’ (বাহক বা এডিস মশা)। এ তিনটি বিষয়ের যদি সম্মিলন হয় এবং কোনো অঞ্চলে যদি বৃষ্টিপাত বেশি থাকে ও বাতাসে আর্দ্রতা থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ওই জীবাণুর সংক্রমণ বাড়বে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এটিই হয়েছে।

দেখা গেছে, বরগুনায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। ডেঙ্গু রোগী আছে এবং জনসংখ্যাও বেশি। এই জেলায় ডেঙ্গুর বিস্তৃতি ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। এই বিস্তৃতির কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। যদি সঠিক কারণ খুঁজে বের করা না যায়, তাহলে সমাধানও বের করা সম্ভব না। বরগুনায় কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় লবণাক্ততা বেশি। সে কারণে সেখানকার মানুষজন রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য বালতি কিংবা ড্রামে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যখন আমরা মানুষকে বলেছি, এই পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তখন তারা বলেন, সেগুলো লার্ভা নয়, পানির পোকা। তারা বিশ্বাসই করেননি, সেগুলো এডিস মশা। ওই জেলায় যতদিন পানির সংকটের সমাধান করা যাবে না, ততদিন ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া নাগরিকদের সচেতন করতে হবে। তারা যেন পানির পাত্রগুলো ঢেকে রাখে। এ বিষয়ে তাদের জানাতে হবে। পাত্রের ঢাকনা একটু ফাঁক থাকলে এডিস মশা ঢুকে ডিম পাড়বে। ফলে সেই বাড়িতে ডেঙ্গু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

দেশের অর্ধেক ডেঙ্গু রোগী যেহেতু বরগুনায়, তাই জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ‘হটস্পট ম্যানেজমেন্ট’ প্রয়োজন। এর মানে হলো, যেই বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেই বাড়ির চারপাশে ২০০ মিটারের মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে লার্ভিসাইড করার মাধ্যমে সব মশা মেরে ফেলতে হবে। কোনো মশা যেন বেঁচে না থাকে। কারণ, বেঁচে থাকলে আশপাশে ডেঙ্গু জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়বে। অন্যদিকে, যেসব স্থানে ডেঙ্গু ছড়ায়নি, সেসব স্থানে লার্ভিসাইডিং করে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে। যেসব পাত্রে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়, সেসব পাত্র ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে। এসব পাত্রে যেন ছিদ্র না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে কাজ করলে বরগুনায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখনও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়নি। আগামী দিনগুলোতে এ রোগ আরও বাড়বে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। সামনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং বরিশাল জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এসব জেলায়ও জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা ধ্বংস করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

×