ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০ | ০৭:০৯

করোনা চিকিৎসায় রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতির নথি জব্দ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে বিশেষ অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা রোববার রাজধানীর মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সোমবারের মধ্যে সব তথ্য, নথি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন।

জানা গেছে, প্রতারণা, দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার সাহেদ করিমের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের নানা তথ্য, নথি চেয়ে গত ১৪ জুলাই দুদক উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছিল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের কাছে। অতি জরুরি ভিত্তিতে নথিগুলো চাওয়া হয়েছিল। চিঠি পাঠানোর চার দিন পরও নথিপত্র না দেওয়ায় রোববার এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানটি শুরু করা হয় বিকেল পৌনে ৩ টার দিকে। শেষ হয় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে। অভিযান চলাকালে দুদক উপ-পরিচালক আবুবকর সিদ্দিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স, নবায়ন, করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত চুক্তির কপি, করোনা নমুনা পরীক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে রিজেন্ট হাসপাতালকে দেওয়া বিল-ভাউচারের কপিসহ অন্যান্য তথ্য চাওয়া হয়।

এ সময় দুদকের চাওয়া তথ্য, নথিপত্রগুলো দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন মহাপরিচালক। পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওইসব তথ্য দিতে মহাপরিচালককে তাগাদা দেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার তথ্য ও যাবতীয় নথিপত্র দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে অভিযান শেষে দুদক উপ-পরিচালক আবুবকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালকের প্রতিশ্রুতির কথা জানান। তিনি বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থে অতি জরুরি ভিত্তিতে রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে তথ্য, নথিপত্র চাওয়া হয়েছিল গত ১৪ জুলাই। গত চার দিনেও তথ্যগুলো না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অধিদপ্তরে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, মহাপরিচালক সোমবার সব ধরনের তথ্য, নথিপত্র সরবরাহ করতে চেয়েছেন।

ভেতরে অবস্থানকালে মহাপরিচালক সহযোগীতার মনোভাব প্রকাশ করেছেন কি-না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে আবুবকর সিদ্দিক বলেন, সোমবার তথ্য দিতে চেয়েছেন। তার কথা অনুযায়ী তথ্য দিলে বোঝা যাবে সহযোগীতা করছেন। আর কথামত তথ্য না দিলে বোঝা যাবে সহযোগীতা করছেন না। সহযোগীতা না করলে দুদক আইনে অন্য ব্যবস্থার কথা বলা আছে।

সূত্র জানায়, দুর্নীতির কোন অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদক কর্তৃক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চাওয়া হলে যথাসময়ে ওইসব তথ্য দেওয়া না হলে অসহযোগীতার অভিযোগে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪ এর ১৯(৩) ধারায় মামলা করা হয়ে থাকে। এই মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দুদকের অভিযানের পর সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্য জানার জন্য অধিদপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী বাধা দেন। কেন ভেতরে যাওয়া যাবে না- জানতে চাইলে বলেন, ‘স্যার নিষেধ করেছেন। স্যার বলেছেন, কোন সাংবাদিক যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।’ সাংবাদিকরা কথা বলতে চায়- এটি স্যারকে বলতে বলা হলে নিরাপত্তা কর্মী জানান, তিনি এই কথা বলতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘আপনারা অনুমতি নেন। তখন ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হবে না। এখন স্যার আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটিই আমাকে পালন করতে হবে।’

জানা গেছে, এর আগে দুদকের বিশেষ টিমের সদস্যরা গত ১৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র জব্দ করেছেন। ওই সময় উপ-পরিচালক আবুবকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে টিমের সদস্যরা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালে করেনা চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে অধিদপ্তরের নথিপত্র যাচাই করে বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার ব্যাপারে চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্রেও অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এই কারণে দ্বিতীয় দফায় সুনির্দিষ্ট তথ্য ও নথিপত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। এতে আশাব্যাঞ্জক সহযোগীতা না পাওয়ায় রোববার ওই অভিযান চালানো হয়।

দুদক জানায়, সাহেদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ডিএনসিসিসহ আরও আট প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুদক। এই অনুসন্ধান টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ ৯ প্রতিষ্ঠানে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, সাহেদের বিরুদ্ধে মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ, বহুমাত্রিক জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরষ্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাত, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ওইসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাহেদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগসহ নানা দুর্নীতি, প্রতারণার অভিযোগে গত ৬ জুলাই সাহেদকে প্রধান আসামি করে হাসপাতালের সংশ্নিষ্ট ১৭ জন ও অজ্ঞাত উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় তিনটি মামলা করেছে র‌্যাব। বর্তমানে গোয়েন্দারা সাহেদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

আরও পড়ুন

×